বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে কর্নাটক পুলিশ। ফাইল চিত্র।
২১ বছরের মেয়েকে ‘দেবদাসী প্রথা’র মধ্যে জোর করে ঢোকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বাবা-মাকে। কর্নাটকের কোপ্পালা জেলার ঘটনা।
পুলিশে দায়ের হওয়া এফআইআর অনুযায়ী, গত মে মাসে ওই তরুণীকে মন্দিরে রেখে চলে যান তাঁর বাবা-মা। মন্দিরের দেবতা এবং পূজারীর সেবা করার জন্য মেয়েকে দায়িত্ব দেন তাঁরা। সম্প্রতি ওই তরুণী পুলিশের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগ, তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলে তাঁকে একটি মন্দিরে রেখে চলে যান বাবা-মা। তিনি বাবা-মাকে কাতর অনুরোধ করলেও কেউ কথা শোনেননি। তাঁরা মেয়েকে নাকি বলেন, ভগবানের অভিশাপে তিনি অসুস্থ হয়েছেন। তাই ঠাকুরের সেবা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পুলিশ জানিয়েছে, যমুনারুপ্পা মুন্ধলমানি, তাঁর স্ত্রী এবং আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁদের কাছে তরুণী অভিযোগ করেন, তাঁকে দেবদাসী হতে জোর করেন বাবা-মা। এ নিয়ে কোপ্পালের পুলিশ সুপার অরুণাংশু গিরি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘দেবদাসী প্রথার এই ঘটনা সামনে এসেছে নির্যাতিতা তরুণীর জন্য। তিনি নিজেই অভিযোগ করেছেন যে, বাবা-মা তাঁকে এই প্রাচীন প্রথা পালন করতে জোর করেছেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে মন্দিরে রেখে গিয়েছেন।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বাবা-মা পুলিশকে জানিয়েছেন, মেয়ে অসুস্থ বলে তাঁরা তাঁকে ভগবানের সেবা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। কারও পরামর্শে তাঁরা এই কাজ করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দেবদাসী প্রথা অনেক পুরনো। আগে দেবদাসীদের বলা হত ‘কলাবন্তী’। তাঁরা শিল্পকর্মে পারদর্শী ছিলেন। মূলত অভিজাত শ্রেণির লোকজন এঁদের এলাকার মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করতেন। তাঁদের কাজ ছিল মন্দির পরিষ্কার রাখা, পুজোর সময় এবং ধর্মীয় শোভাযাত্রায় নাচগান পরিবেশন করা ইত্যাদি। এই কাজের জন্য দেবদাসীদের মন্দিরের তহবিল থেকে কিছু টাকাপয়সা দেওয়া হত বটে, তবে সেগুলো তাঁদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম ছিল। তাই তাঁদের ধর্মের নামে যৌনপেশায় যুক্ত হতে বাধ্য করা হত। কিছু কিছু জায়গায় এখনও এই প্রথা চালু রয়েছে।