আত্মবিশ্বাসী। ছবি: পিটিআই
ক্ষমতা দখলের লড়াই যত তীব্র হচ্ছে, দুই শিবিরের মধ্যে উত্তেজনা তত বাড়ছে।
শশিকলা বনাম পনীরসেলভম।
আর এই লড়াইয়ে যত দিন যাচ্ছে, তত সমর্থন কমছে শশিকলার। অন্য দিকে ক্রমশ একটু একটু করে নিজের ঘর গুছিয়ে নিচ্ছেন পনীরসেলভম।
জয়ললিতার উত্তরসূরি কে হবেন, তা অনেকাংশেই ঝুলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপরে। সেখানে শশিকলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় কবে ঘোষণা হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এই পরিস্থিতিতে রবিবার দিনভর দল গোছাতে ব্যস্ত ছিল দুই শিবির। আর তাতেই বোঝা গিয়েছে, পনীরের পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই শশিকলার ঘর ভেঙে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের স্বপ্নে ছাই দিতে তৎপর হয়েছেন পনীরসেলভম। ২৩৪ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভায় এডিএমকে-র বিধায়ক সংখ্যা ১৩৪। শশিকলা শিবিরের দাবি, ১২৯ জন বিধায়ক তাঁদের দিকে রয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে পনীর-শিবির বলছে, তাঁদের হাতে আছেন অন্তত ৭ জন বিধায়ক। আরও বেশ কয়েক জন শিগগিরই শশী-শিবির ছেড়ে তাঁদের দিকে আসতে পারেন। পাশাপাশি রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে, রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে অন্তত দশ সাংসদ পনীরসেলভমের পক্ষে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এডিএমকে-র প্রভাবশালী নেতা তথা রাজ্যসভা সাংসদ ভি মৈত্রেয়ন।
পনীরের পক্ষে বাড়ছে আমজনতার সমর্থনও। আজ প্রকাশ্যেই পনীরসেলভমের পাশে দাঁড়িয়েছেন তামিল সিনেমার দুই প্রভাবশালী মুখ, রামরাজন ও থাইয়াগু। প্রাক্তন বিধায়ক তথা নায়ক-পরিচালক অরুণ পান্ডিয়ানও সমর্থন জানিয়েছেন পনীরকে।
অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আর ডজন খানেক বিধায়ক পনীর-শিবিরে গেলেই চাপে পড়ে যাবেন শশিকলা। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। সূত্রের খবর, আজও শশিকলার তরফে রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও-কে ফের অনুরোধ করা হয়, তিনি যেন সরকার গড়ার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। শশী-ঘনিষ্ঠ সাংসদ আর ভাইথিলিঙ্গমের কথায়, ‘‘সোমবারের মধ্যে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত না নিলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিতে পারেন চিনাম্মা শশিকলা।’’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের উপর থেকে রাশ যে দ্রুত আলগা হচ্ছে, তা বুঝছেন শশিকলা নিজেও। বিশেষ করে রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী, কে পান্ডিয়ারাজন পনীরের পাশে দাঁড়ানোয় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শশী-ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের আশঙ্কা, প্রভাবশালী ওই নেতা ছলে-বলে-কৌশলে শশিকলা শিবিরকে একাই তছনছ করে দিতে পারেন। তাই ওই নেতাকে বাগে আনতে দেরিতে হলেও আসরে নেমেছেন শশিকলার স্বামী এম নটরাজন। রাতে নটরাজনের সঙ্গে দেখা করতে পোয়েজ গার্ডেনের বাড়িতে যান পান্ডিয়ারাজন।
অন্য দিকে দল ভাঙা রুখতে ও বিধায়কদের মনোবল বাড়াতে বিধায়কদের অস্থায়ী ঠিকানা গোল্ডেন বে রিসর্টে গিয়ে দেখা করেন শশিকলা। সেখানে ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের কাছে তিনি কেঁদেও ফেলেন বলে এডিএমকে-র একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। বিধায়কদের পাশাপাশি আমজনতার সমর্থনও যে তাঁর দরকার, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জয়ললিতার ৩৪ বছরের পুরনো সঙ্গিনী। তাই আজ কৌশলগত ভাবেই জয়ললিতার নাম উল্লেখ করে আবেগের তাস খেলতে চেয়েছেন শশী। রিসর্টে বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করার আগে একটি কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যে গোষ্ঠী জয়ললিতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল, তারা এখন আমার বিরুদ্ধেও সক্রিয় হয়েছে। একজন মহিলার পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকা শক্ত। জয়ললিতাকেও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এখন আমাকে হচ্ছে।’’ বিধায়কদের আটকে রাখা নিয়ে পনীর-শিবিরের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন।
ভোটের অঙ্কে কপাল খুলতে পারে প্রণবের
পাল্টা জবাবে পনীর বলেন, ‘‘আটকে রাখা না হলে ওই বিধায়কদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। যাঁতে তাঁরা নিজেদের কেন্দ্রে যেতে পারেন।’’ একই সঙ্গে জয়ললিতার মৃত্যু-রহস্যকে আরও একটু উস্কে শশী-শিবিরকে চাপে ফেলতে চেয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন জয়ার দেহ তাঁর ভাইঝি দীপা জয়কুমারকে দেখতে দেওয়া হয়নি?’’
শশিকলার চাপ বাড়িয়েছে বিজেপির অবস্থানও। প্রথমে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো বিজেপি নেতা শশিকলার পাশে দাঁড়ালেও বিজেপির একটি অংশ ক্রমশ পনীরসেলভমের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। আগের অবস্থান থেকে সামান্য সরে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আজ সকালে টুইটে বলেন, ‘‘আগামিকালের মধ্যে রাজ্যপালের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত। তা না হলে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।’’ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি অংশ আজ দাবি করেছে, তাঁকে চক্রান্ত করে সরানোর যে অভিযোগ পনীরসেলভম এনেছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই বলেছেন, শশিকলার মতো অভিযুক্ত নেত্রীর পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পনীরসেলভমের উপরে বাজি ধরাটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে বিজেপি একটি বড় অংশ।