সীমান্তে সজাগ ভারতীয় সেনা। —ফাইল চিত্র।
সীমান্ত এলাকায় শুধুমাত্র যে চিনা আগ্রাসনের জন্যই ভারতকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে, এমনটা নয়। দোসর হিসাবে রয়েছে পাকিস্তানের চোখরাঙানিও। পূর্ব লাদাখে লাল ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করার ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করা থেকে শুরু করে অনুপ্রবেশ, সীমান্তের ও পার থেকে গোলাগুলি বর্ষণ— কোনও কিছুই বন্ধ করেনি পাক সেনা।
মঙ্গলবার ভারত জানিয়েছে, কেবলমাত্র চলতি বছরের প্রথম ন’মাসেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় ৩,১৬৮ বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। যা গত ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার ওই চুক্তি লঙ্ঘনের নজির। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ দিন সংসদে এই পরিসংখ্যান পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রীপদ নাইক।
ভারতের দাবি, ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় গত ১ জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙেছে পাক সেনা। পাশাপাশি, জম্মু ও কাশ্মীরে ১৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়ানোর কসুর করেনি তারা। ওই এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগস্টের মধ্যে ২৪২ বার সীমান্তের ও পার থেকে গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কামান থেকে শুরু করে মর্টার-হামলা বা গুলিচালনা অথবা জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটানো— বার বার সীমান্তের এ পারের বিভিন্ন এলাকাকে নিশানা করেছে পাক সেনা।
আরও পড়ুন: চিনা আগ্রাসনেই এলএসিতে উত্তেজনা বেড়েছে, লোকসভায় রাজনাথ
ভারতীয় সেনার রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৭-তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় ৯৭১ বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল পাকিস্তান। পরের বছর তা বেড়়ে হয়েছিল ১,৬২৯ বার। তবে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সে সব নজিরই ভেঙে দিয়েছে তারা। সেনার দাবি, গত বছর বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের পরই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় নিশানার মাত্রা তীব্র করে পাকিস্তান। এর পর সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার পরও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জের মহিলা কমিশনের ভোটে ভারতের কাছে গো হারা হারল চিন
ভারতের দাবি, চলতি বছরের প্রায় প্রতি মাসেই গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে পাকিস্তান। সেনার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “পাকিস্তান অবশ্যই তার ‘বন্ধু’ চিনকে সমর্থন করে চলেছে। তা ছাড়া, শীতকালে তুষারপাত শুরু হলে জম্মু-কাশ্মীরের রাস্তা বন্ধ হওয়ার আগে সেখানে যত সম্ভব জঙ্গির অনুপ্রবেশ ঘটানো এবং অস্ত্রশস্ত্র ঢোকানোরও চেষ্টা করছে।” তবে পাকিস্তানের চেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য ভারতীয় সেনা যে তৎপর, তা-ও উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই সেনাকর্তার মন্তব্য, “পাকিস্তানের প্রতিটি সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ও হামলার যোগ্য জবাব দিয়েছে আমাদের সেনা।” শ্রীপদ নাইক এ দিন সংসদে জানিয়েছেন, বার বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়টি পাক কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। তবে তা যে ফলপ্রসূ হয়নি, সেটি এ দিনের প্রকাশিত কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট!
পাকিস্তানের পাশাপাশি চিনা আগ্রাসনের জেরে যাতে সীমান্তের স্থিতাবস্থা বিগড়ে না যায়, সে দিকেও কড়া দৃষ্টি রয়েছে ভারতের। গত মে মাসে পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর কূটনৈতিক স্তরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেছে দু’পক্ষই। তবে এ ব্যাপারে চিনের সদিচ্ছা নিয়ে বার বারই প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় দু’দেশই নজরদারি চালায়। চিনা আগ্রাসনের পর ভারত সেখানে অন্তত ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। তবে চিনা আগ্রাসন ঠেকাতে গিয়ে পাকিস্তানের চোখরাঙানিকেও অগ্রাহ্য করছে না ভারত।