কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে প্রতিশ্রুতি দিলেও অপরাধী শনাক্তকরণ আইন (২০২২)-এর যে ধারা গত কাল সামনে এসেছে, তাতে কার্যত বিরোধীদের একটি মাত্র দাবি মানা হয়েছে। বিরোধী নেতাদের ক্ষোভ, এই দাবিও আংশিক মেনেছে সরকার।
গত এপ্রিলে সংসদে পেশ হওয়া ওই বিলে রাজনৈতিক ধর্না বা সরকার-বিরোধী কোনও বিক্ষোভে শামিল হয়ে কেউ গ্রেফতার হলে তাঁর শারীরিক মাপজোখের সঙ্গে বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে। সংসদে আলোচনার সময়ে তা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান বিরোধীরা। তাঁদের মতে, যে কোনও রাজনৈতিক বিরোধীকেই কার্যত অপরাধী বলে দাগিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হয়ে উঠবে ওই ধারাটি।
বিল পাশ করাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের জেরে ধৃতদের শারীরিক মাপজোখ ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হবে না। কিন্তু গত কাল কেন্দ্র আইনটির যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে বিরোধীদের দাবি মানা হলেও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অতীত অপরাধের ইতিহাস থাকলে ওই নিয়ম কার্যকর হবে না। সে ক্ষেত্রে পুলিশ চাইলে শারীরিক মাপজোখ ও নমুনা সংগ্রহ করতেই পারে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও ওই ধারা এনে গায়ের জোরে নিজেদের মত চাপিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আসলে শাসক দলের নেতারা নিজেরা অপরাধী, তাই সেই মানসিকতা থেকে সকলকে অপরাধী ভাবেন।’’
দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই অভিযুক্তের শারীরিক মাপজোখের সঙ্গে বায়োলজিক্যাল নমুনা, যেমন চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান বা ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে যুক্তি দিয়েছিল মোদী সরকার। যদিও বিরোধীদের যুক্তি ছিল, এগুলি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। বিরোধীদের আপত্তিতে শাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন, যে সব অপরাধের ক্ষেত্রে সাজা ন্যূনতম সাত বছর, সেই সব অপরাধে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেই কেবল বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু গত কাল যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, তাতে সে ধরনের কোনও শর্তের উল্লেখ করা হয়নি। যার অর্থ, পুলিশ চাইলে ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তের শারীরিক ও বায়োলজিক্যাল যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবে।
বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, যে তথ্যভাণ্ডারে তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, তা থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ডিএনএ প্রযুক্তি বিল এখনও পাশ হয়নি। লোকসভায় এনেও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তথ্য-সুরক্ষা বিল। বিভিন্ন সময়ে আধারের তথ্যও ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাজেই এ ক্ষেত্রেও বায়োলজিক্যাল তথ্য কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে বিরোধীরা সন্দিহান।