বাজেটের পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারেই সমস্ত কাজ বন্ধ রেখে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদের দু’টি কক্ষে নোটিস দিতে চলেছে তৃণমূল। ছবি: সংগৃহীত।
সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনাতেই কৃষি আইনের বিষয়টি তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর জবাবও দেবেন। সুতরাং এই নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করা এই স্বল্পমেয়াদী অধিবেশনে অর্থহীন। বিরোধী শিবিরকে এ কথা জানিয়েছে সরকার পক্ষ। সূত্রের খবর, সরকারের এই প্রস্তাব মানতে নারাজ কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, অকালি, আপ, এসপি-সহ বিরোধীরা। বাজেটের পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারেই সমস্ত কাজ বন্ধ রেখে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদের দু’টি কক্ষে নোটিস দিতে চলেছে তৃণমূল। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য দলগুলিও এমন পদক্ষেপ করবে বলে খবর।
সব মিলিয়ে বাজেটের পরের দিন কৃষি আইন নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদে অধিবেশন ভন্ডুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রীর পর আজ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু তাঁর কক্ষের সব দলের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে আলোচনার পরিবেশ এবং মেয়াদ দু’টির দিকেই নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আজকের এই বৈঠকে ২৫টি দলের নেতা এবং প্রায় বারো জন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। কথা ছিল, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় বাজেট অধিবেশনের প্রথম দফা শেষ হবে। আজ স্থির হয়েছে, দু’দিন আগেই অর্থাৎ ১৩ তারিখেই বসবে রাজ্যসভার শেষ অধিবেশন। লোকসভার অধিবেশনও শেষ হবে ওই একই দিনে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে পরস্পরের প্রতি যুযুধান থাকলেও, সংসদে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির মধ্যে কক্ষ সমন্বয় মসৃণ ভাবেই হবে। মঙ্গলবার যদি কৃষি আইন নিয়ে আলাদা করে আলোচনার দাবি না-মানা হয়, তা হলে বিক্ষোভে অধিবেশন ভন্ডুল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।” তবে প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জিরো আওয়ার-কে কাজে লাগাবেন বিরোধীরা। এর আগে অতিমারির সময়ে হওয়া বর্ষাকালীন অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল। ডেরেকের মতে, এটাই একমাত্র সুযোগ মন্ত্রীদের তথা সরকারকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর।
কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, “কৃষকদের বিষয়টি তো রয়েছেই। তা ছাড়া বেকারত্ব, নিরাপত্তা, সীমান্ত, কাশ্মীরের মতো বিষয়গুলিতে আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করব চলতি অধিবেশনে। বিরোধী দলগুলির মধ্যে কক্ষ সমন্বয় নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সমন্বয় রয়েছেই বলেই তো সমস্ত বিরোধী দল একযোগে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করতে পারল।”
তৃণমূল সূত্রের অবশ্য দাবি, কংগ্রেস তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য অকালি এবং আপকে এড়িয়ে চলছে। পঞ্জাব এবং দিল্লির রাজনীতির কথা মাথায় রেখে তাদের ওই ষোলটি বিরোধী দলের তালিকায় (রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করার যৌথ বিবৃতিতে) রাখেনি কংগ্রেস। সূত্রের মতে, আপ এবং অকালি নেতৃত্ব এখন কংগ্রেসের পরিবর্তে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে তৃণমূলের সঙ্গে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পূর্ব লাদাখে চিনের ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার বিষয়টি নিয়েও মোদী সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিতে চলেছেন বিরোধীরা। সূত্রের খবর, আজ বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে ডোকলাম কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে চিন নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিং দাবি করেছিলেন তিনি, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে। কিন্তু আজও সেই ব্রিফিং হয়নি। বেঙ্কাইয়া সংসদ বিষয় মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি দেখার জন্য।