তিনি বিজেপির নেতা। কর্নাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী। নোট-বাতিলের পরে গোটা দেশে যখন নগদের হাহাকার, তখন তাঁর মেয়ের বিয়েতে খরচ হয় ৫০০ কোটি টাকা। এক-একটি নিমন্ত্রণের কার্ড তৈরিতেই খরচ পড়েছিল ৭ হাজার টাকা। তাঁর নামে ৩৫ হাজার কোটি টাকার আকরিক লোহা বেআইনি ভাবে বিদেশে রফতানি করে দেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু কর্নাটকের এই খনি-সম্রাট গালি জনার্দন রেড্ডির বিরুদ্ধে পাঁচ বছর তদন্ত চালিয়েও কোনও প্রমাণ খুঁজেই পাচ্ছে না সিবিআই। তারা তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জনার্দন রেড্ডির বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনও যৌক্তিকতা মিলছে না। কর্নাটকের লোকায়ুক্তের রিপোর্ট যদিও বলছে, ওই ৩৫ হাজার কোটি টাকা দামের আকরিক লোহার খনন ও বিদেশে রফতানি, সবটাই হয়েছে বেআইনি পথে।
কংগ্রেস তৃণমূল, আরজেডি নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই যখন প্রায় রোজই নিয়ম করে হানা দিচ্ছে, সেই সময় বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের নরম মনোভাব নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, মোদী সরকার বেছে বেছে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামাচ্ছে সিবিআইকে। পি চিদম্বরম এবং তাঁর ছেলে, লালু প্রসাদ থেকে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়—কাউকেই ছাড়ছে না সিবিআই। অথচ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত থেকে সিবিআই চুপচাপ পিছিয়ে আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালু প্রসাদ, চিদম্বরমরা অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘবী বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটের আগে বলেছিলেন, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি নেতাদেরও ছাড়বেন না। জেলে পাঠাবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সিবিআই জনার্দনের বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার কোটি টাকার মামলা গুটিয়ে ফেলতে চাইছে!’’ সিবিআই বা সরকারি সূত্র বিরোধীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। বরং মোদী সরকার যে রেড্ডি সম্পর্কে নরম মনোভাব নিচ্ছে না, সেটাই দেখাতে তড়িঘড়ি শুক্রবার বিকেলেই ইডি রেড্ডিদের বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট দিয়েছে। যা দেখিয়ে মোদী সরকারের যুক্তি, ওই চার্জশিটেও জনার্দন ও তাঁর আত্মীয় বি ভি শ্রীনিবাস রেড্ডির নাম রয়েছে। সিবিআই-ও আগেই চার্জশিট পেশ করেছে।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র অবশ্য মানছে, রেড্ডিদের দোষী সাব্যস্ত করার মতো প্রমাণ জোগাড় করতে অসুবিধা হচ্ছে। রেড্ডির বিরুদ্ধে অভিযোগ, আকরিক লোহা খননের জন্য যে জমি তিনি পেয়েছিলেন, তাঁর বাইরে বনাঞ্চল নষ্ট করে খনন চালান। তাঁকে যতটা আকরিক লোহা রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তার অনেক বেশি লোহা বিদেশে পাচার করেন। কিন্তু সমস্যা হল, রেড্ডি তাঁর সিংহভাগ অর্থই মরিশাস বা ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের মাঝে ‘আইল অব ম্যান’-এর মতো কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে পাচার করে দিয়েছেন। মরিশাস, আইল অব ম্যান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে একাধিক সংস্থা খুলেছেন রেড্ডি। কিন্তুএই দেশগুলি থেকে রেড্ডির সেই টাকার উৎস সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য মিলছে না।
এক সময় সুষমা স্বরাজের সঙ্গে রেড্ডিদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। পরে রেড্ডিদের নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সুষমা তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন। কিন্তু রেড্ডিদের মাথায় হাত দিয়ে সুষমার ছবিটি রয়েই গিয়েছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, রেড্ডিদের বাঁচাতে এখন কার ‘অদৃশ্য হাত’ কাজ করছে!