সাংবাদিক বৈঠকে আহমেদ পটেল ও শরদ পওয়র। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
সময় ছিল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। তার মধ্যে সরকার গঠনের দাবি জানাতে হত এনসিপিকে। ঘণ্টা দুয়েক বাকি থাকতেই মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে গেল। সব পক্ষকে সুযোগ না দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্তের জন্য এ বার কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল বিরোধীরা। তাদের মতে, কোনও নিয়ম-নীতি না মেনে সরাসরি ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছে মোদী সরকার।
এ দিন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরই মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মধ্যে বৈঠক হয়। তার পর আহমেদ পটেল, শরদ পওয়র এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে-সহ দুই দলের নেতারা যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছি। গত পাঁচ বছরে এই সরকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যস্থার কোনও নিয়ম-কানুন মানেনি। এ ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের জারি করে গণতন্ত্রকে পরিহাস করা হয়েছে। বিজেপি, শিবসেনা, এনসিপির পর কংগ্রেসকে সরকার গঠনের জন্য ডাকাই হয়নি।’’
শিবসেনাকে সমর্থনে গড়িমসি করার অভিযোগে আহমেদ পটেল বলেন, ‘‘আনুষ্ঠানিক ভাবে ১১ নভেম্বরই আমাদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে শিবসেনা। ওদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নেই তাঁরাও তাড়াহুড়ো করতে চান না বলে জানান শরদ পওয়র। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোনও তাড়াহুড়ো নেই। কংগ্রেসের সঙ্গে সিবস্তার আলোচনা সেরেই সিদ্ধান্ত নেব শিবসেনাকে সমর্থন দেওয়া হবে কি না।’’
কংগ্রেস-এনসিপির যৌথ সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই মুম্বইয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্ষমতালোভী নই। ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী দলগুলি মিলে একসঙ্গে সরকার চালাতে গেলে সবিস্তার আলোচনা প্রয়োজন। কালই প্রথম কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু জোট সরকার কীভাবে হবে, তা নিয়ে আরও স্বচ্ছতা চেয়েছিল কংগ্রেস। এখন হাতে ছ’মাস সময় রয়েছে। কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’’
বিজেপি প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলেই তাদের সঙ্গে জোট টেকেনি বলেও জানান উদ্ধব। তিনি বলেন, ‘‘দুঃসময়ে বিজেপির পাশে ছিলাম। ওদেরও প্রতিশ্রুতি পালন করা উচিত ছিল। বিজেপি-শিবসেনা অনেক বছর একসঙ্গে ছিল। কিন্তু এখন কংগ্রেস এবং এনসিপির হাত ধরতে হবে শিবসেনাকে। দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার জন্য অরবিন্দ সবন্তকে ধন্যবাদ। ক্ষমতার প্রতি লোভ থাকে অনেকের, উনি তার মধ্যে পড়ে না।’’
তবে উদ্ধবের দাবি উড়িয়ে বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, সরকার গড়তে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখবে না তারা। দলের নেতা নারায়ণ রানে বলেন, ‘‘কংগ্রেস-এনসিপি মিলে শিবসেনাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি সরকার গড়তে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। চেষ্টায় কোনও খামতি রাকবেন না দেবেন্দ্র ফডনবীস।’’
এ দিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস নেতা তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল। কারও উদ্দেশ্য সাধন করতেই রাজ্যপাল এই তাড়াহুড়ো করেছেন।’’
সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এনসিপির শরদ পওয়রকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মাহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। তা অতিক্রম হওয়ার আগে কীভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করলেন তিনি? এটা সংবিধানের হত্যা। ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর তীব্র আঘাত হেনেছে মোদী সরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার নীতি, নিয়ম মানছে না তারা। এর আগে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরএবং আরও অনেক রাজ্যে বার বার একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা।’’
আরও পড়ুন: জল্পনার অবসান, মহারাষ্ট্রে জারি রাষ্ট্রপতি শাসন, বিজ্ঞপ্তিতে সই করলেন রামনাথ কোবিন্দ
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সঞ্জয় নিরপম টুইটারে লেখেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন রাজ্যপাল। উনি নিজেই তো এনসিপিকে এই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তাই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।’
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীস নিজের বিবৃতিতে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসন দুর্ভাগ্যজনক। তবে মাদের আশা খুব শীঘ্র স্থিতিশীল সরকার পাবে মহারাষ্ট্র।’
দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা টুইটারে লেখেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করে কেন্দ্রের এজেন্টের মতো কাজ করলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। পারস্পরিক ঝামেলা মিটিয়ে এ বার ওই তিনটি দলের একজোট হয়ে এগিয়ে আসা উচিত।’
আরও পড়ুন: সরকার গড়তে মাত্র এক দিন সময়! রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল ক্ষুব্ধ শিবসেনা
নির্বাচনী ফলাফলের পর ২০ দিন কাটতে চললেও, এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের দাবি জানাতে পারেনি কোনও রাজনৈতিক দল। তার জন্য এ দিন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করেন রাজ্যপাল রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কেশিয়ারি। এর পরেই বিদেশ সফর বিলম্বিত করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে সায় দিয়ে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনকে সুপারিশ করা হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাতে সই করে দেন সেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।