Mother teresa

Missionaries of Charity : ‘খ্রিস্টানরা নিশানায়’, প্রতিবাদে বিরোধীরা

কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের প্রশ্ন, গোটা বিশ্বে পরিচিত এই সংস্থাকে নিশানা করে মোদী সরকার কি মাদার টেরিজার উত্তরাধিকারকে নষ্ট করতে চাইছে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২১
Share:

ফাইল চিত্র।

মাদার টেরিজার মিশনারিজ় অব চ্যারিটির বিদেশি অনুদান বন্ধ করে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ল মোদী সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, মিশনারিজ় অব চ্যারিটিকে নিশানা করে মোদী সরকার তথা বিজেপি আসলে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের নিশানা করতে চাইছে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালই এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বিদেশি সংবাদমাধ্যমে এ দেশে খ্রিস্টানদের উপরে ‘হামলার’ খবর তুলে ধরেছেন। বলেছেন, “আমাদের দেশের অনেকেই বালিতে মুখ গুঁজে থাকলেও গোটা বিশ্ব দেখছে।” এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার ডাক দিয়ে রাহুলের মন্তব্য, “অন্যায়ের সময় মুখ বুজে থাকাও সমান অপরাধ।”

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিজেই সোমবার জানিয়েছিল, মিশনারিজ় অব চ্যারিটির বিদেশি অনুদান পাওয়ার ছাড়পত্র বাতিল করা হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে মাদার টেরিজার তৈরি সংস্থা কোনও বিদেশি অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। বিদেশি অনুদানের ছাড়পত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায়, যে সব অ্যাকাউন্টে বিদেশি অনুদান আসত, চ্যারিটির তরফে সেগুলি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, “যিনি দেশের গরিব, দুঃখী মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই মাদার টেরিজার স্মৃতির প্রতি এর থেকে বড় অপমান আর কিছু হতে পারে না।” অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল, বিদেশি অনুদানের ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণের সময় কিছু বিরূপ তথ্য মেলায় ওই প্রক্রিয়া আটকে যায়। কী বিরূপ তথ্য, তা স্পষ্ট না করলেও ইঙ্গিত ছিল গুজরাতে চ্যারিটির শাখার বিরুদ্ধে ধর্ম পরিবর্তন ও হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ নিয়ে পুলিশি তদন্তের দিকে। চিদম্বরম বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিছু বিরূপ তথ্য পেয়েছে বলে দাবি করেছে। এই শার্লক হোমসের মতো দক্ষতা সাম্প্রদায়িক হিংসা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করতে কাজে লাগানো উচিত। খ্রিস্টানদের সেবামূলক ও মানবিক কাজ বন্ধ করতে নয়।” তাঁর বক্তব্য, এটা এখন স্পষ্ট, ২০২১-এর শেষে মোদী সরকার নতুন নিশানা খুঁজে পেয়েছে। নিজেদের সংখ্যাগুরুবাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার খ্রিস্টানরা তাদের নিশানা।

Advertisement

মিশনারিজ় অব চ্যারিটি ২০২০-২১-এ যে আর্থিক লেনদেনের হিসেব পেশ করেছিল, তাতে বলা হয়েছে, তারা ৩৪৭ জন ব্যক্তি ও ৫৯টি সংস্থার থেকে মোট ৭৫ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান পেয়েছিল। সব থেকে বেশি অনুদান এসেছিল আমেরিকা ও ব্রিটেন থেকে। আগের বছরের বিদেশি অনুদান বাবদ সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে ২৭.৩ কোটি টাকা ছিল। কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের প্রশ্ন, গোটা বিশ্বে পরিচিত এই সংস্থাকে নিশানা করে মোদী সরকার কি মাদার টেরিজার উত্তরাধিকারকে নষ্ট করতে চাইছে? তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের বলেন, “দেশে বিরোধীরা রয়েছেন। তাঁরা লড়াই করবেন। সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী রয়েছেন, যিনি সব সময় নিপীড়িতদের হয়ে রুখে দাঁড়ান।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা অভিযোগ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘মমতা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন। অশান্তি তৈরি করতে চাইছেন তিনি। এতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লাভ। মমতার কী লাভ?” সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, আইন ভাঙা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু বড়দিনে চ্যারিটির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও ধর্ম সংসদের দাবি মানা তথা হিন্দুত্বের কর্মসূচির গন্ধ মিলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement