প্রতীকী ছবি।
গণটিকাকরণ কর্মসূচি কতটা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে, তা রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করছে কেন্দ্র ও দেশের প্রধান শাসকদল। আর এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্রের ‘খামতি’ ও ‘দ্বিচারিতা’কে তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছেন বিরোধীরা।
সুপ্রিম কোর্টে সম্প্রতি হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১৮৬ কোটি থেকে ১৮৮ কোটি প্রতিষেধক লাগবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ৫১ কোটি ৬০ লক্ষ টিকা কেন্দ্রের হাতে আসবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়বে ১৩৫ কোটি টিকার। বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই ১৩৫ কোটি টিকা নিয়ে। কারণ, গত মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, এ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ২১৬ কোটি ডোজ় পাওয়া যাবে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট-খোঁচা, ‘দেশ যাঁর কাছ থেকে সত্যের প্রত্যাশা করেছিল, তিনি নিজেই জানেন না সত্য কী’!
টিকাকরণ নিয়ে কেন্দ্রের দাবি, দেশে এখনও ৩২ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৯৭ জন প্রতিষেধক পেয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বিশ্বে টিকাকরণে ভারতই সবচেয়ে এগিয়ে। পিছনে ফেলেছে আমেরিকাকেও। একে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে আসরে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর টুইট, ‘ভারতে টিকাকরণ প্রকল্প আরও গতি পাচ্ছে। যাঁরা প্রকল্প চালনা করছেন, তাঁদের অভিনন্দন। বিনামূল্যে টিকাকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।’ আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের টুইট, ‘টিকাকরণে আর একটা মাইল ফলক ছুঁল ভারত। মোট টিকা দেওয়ায় আমেরিকাকেও ছাপিয়ে গেল’।
বিজেপি নেতা অবশ্য যে কথা বলছেন না তা হল আমেরিকাতে ১০০ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। এর মধ্যে দু’টি ডোজ়ই পেয়েছেন ৪৬ শতাংশের বেশি মানুষ। বিরোধী শিবিরের মতে, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য দেওয়ার সময় মোদী সরকার তা দেখায় জনসংখ্যার নিরিখকে শতাংশের হিসেবে। কিন্তু যখন টিকাকরণের মতো ইতিবাচক বিষয়ের পরিসংখ্যান দিতে হয়, তখন সরকার তা দেখায় সংখ্যার হিসেবে। যাতে সংখ্যাটা বিরাট আকারে দেখানো যায়। ভারত-সহ ছ’টি দেশের টিকাকরণের হারের রেখচিত্র পোস্ট করে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন লিখেছেন, ‘এখনও দীর্ঘ পথ পেরোতে হবে। ভারতে প্রতি ২৫ জনে ১ জন (টাইপো নয় প্রতি ২৫ জনে ১ জন) সম্পূর্ণ প্রতিষেধক পেয়েছেন। রেখচিত্র বলছে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে’!
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে প্রবেশের জন্য যে প্রতিষেধকগুলিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে কোভিশিল্ড নেই। আজ এ নিয়ে সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদার পুনাওয়ালার টুইট, ‘কোভিশিল্ড নেওয়ার পর ভারত থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে যেতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। কথা দিচ্ছি, এই বিষয়টি আলোচনার জন্য সর্বোচ্চ স্তরে যাব এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান করব’।
কো-উইন বিদেশেও। কানাডা, মেক্সিকো, ইরান-সহ় প্রায় ৫০টি দেশ ভারতের কো-উইন প্রযুক্তি ব্যবহার করার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সোমবার দাবি করলেন কোভিড-১৯ প্রতিষেধক নিয়ে গঠিত বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আর এস শর্মা। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই দেশগুলিকে বিনামূল্যে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। ৫ জুলাই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে কো-উইনের কার্যকারিতা তুলে ধরা হবে। পেরু, ভিয়েতনাম, আরব, নাইজেরিয়া ছাড়াও আফ্রিকার বহু দেশ ওই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে।