সংস্কারের বিলগুলো এ যাত্রায় আটকাতে সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির ইস্যুতে মহড়ার কাজটি সেরে ফেলতে চায় বিরোধীরা। আজ সংসদে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরেও।
বিজেপি নেতারা বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের অলিখিত সমঝোতা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী যদি সংসদে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিরঞ্জনকে নিয়ে বিবৃতি দেন, তা হলে বিরোধীরা সংসদ চালাতে সাহায্য করবে। আজ প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়ে বলেন, সংসদে এ নিয়ে হইচই হওয়ার আগেই তিনি দলের বৈঠকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, সবাই যেন এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকে। নিরঞ্জন প্রথম সাংসদ হয়েছেন। তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। এই ঘটনা থেকে সকলেই শিক্ষা নিক। কিন্তু সংসদের কাজ যেন আর ব্যাহত না করা হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেও হট্টগোল থামেনি। রাজ্যসভা আজ কোনও কাজ ছাড়াই মুলতুবি হয়। লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিরোধীরা সভাকক্ষ ত্যাগ করে। বিরোধীদের দাবি, তাদের কথা যাতে না শোনা যায়, তার জন্য লোকসভার মাইকও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। আগামী কালও কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম ও জনতা পরিবারের সাংসদরা একযোগে কালো ফেট্টি পরে প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন (যদিও তৃণমূল-সঙ্গ এড়াতে সেই কর্মসূচিতে থাকবেন না বাংলার কোনও সিপিএম সাংসদ)। নিরঞ্জনকে বরখাস্তের দাবি তোলার পাশাপাশি তাঁর কুকথার সমালোচনা করে বিরোধী শিবিরে একটি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণেরও প্রস্তুতি চলছে। এই প্রস্তাবে লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে সম্মতি জানিয়েছেন। কিন্তু সম্মতি দিচ্ছেন না রাজ্যসভার কংগ্রেস নেতারা। বরং আনন্দ শর্মা বলেন, “রাজ্যসভায় ৯টি বিরোধী দল একমত যে, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সভা চলবে না। এর অতিরিক্ত কোনও সমঝোতা বা প্রস্তাবের কথা জানা নেই।”
বিরোধীদের এই আচরণে বিস্মিত সরকার পক্ষ। মোদী সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির পরে অচলাবস্থা কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। সেই সমঝোতা ভঙ্গ করছে তারা। আমরা জানতে পেরেছি, বিরোধী দল হিসেবে অতীতে বিজেপি যে ভাবে সংসদের অধিবেশন স্তব্ধ করত, এখন সেই একই পথে হেঁটে বিজেপিকে জবাব দিতে চায় কংগ্রেস। এবং এ সব কিছুই হচ্ছে সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে।” এই মন্ত্রীর আরও দাবি, “আসলে বিমা বিল-সহ বিভিন্ন বিল সংসদের চলতি অধিবেশনে আটকে দেওয়ার জন্য হট্টগোল জারি রাখতে চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু সোমবারও যদি এমন চলে, হট্টগোলের মাঝেই বিল পাশ শুরু করে দেবে সরকার।”
সিলেক্ট কমিটিতে বিমা বিলে কংগ্রেসের সমর্থন আদায় করে নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেস এখনও ছুতো খুঁজছে। যদি অন্য বিরোধী দলগুলো একজোট হয়ে সভা অচল করে রাখে এবং তাতে বিল আটকে যায়, তাতে কংগ্রেসের অখুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই। সে কারণে সরকারের
শত সাধাসাধিতেও এখনও বরফ গলার ইঙ্গিত দেয়নি বিরোধীরা। কংগ্রেসের নেতারা আজ সাফ জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিলে সংসদ চলতে দেওয়া হবে, এমন কোনও সমঝোতাই সরকারের সঙ্গে হয়নি। আনন্দ শর্মা বলেন, “সাধ্বীর মন্তব্যের নিন্দা করতে প্রধানমন্ত্রীর তিন
দিন সময় লাগল। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দেননি।
যাঁরা ওঁদের ভোট দেননি, সরকারেরই এক মন্ত্রী তাঁদের অবৈধ সন্তান বলে গালি দিচ্ছেন। এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত অচলাবস্থা বজায় থাকবে।”