প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
সংসদে বিতর্কের গুণমানের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপস না-করেও বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বেশি সংখ্যক বিল পাশ করানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের কটাক্ষ, গুণমান তো দূর, সংসদীয় বিতর্কের গুরুত্ব মোদী সরকারের কাছে কত কম, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শেষ অধিবেশনেই। রাজ্যসভায় কৃষি বিলে ভোটাভুটির পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি উঠেছে। আর দুই কক্ষেই (লোকসভা ও রাজ্যসভা) বিরোধীরা অনুপস্থিত থাকাকালীন শ্রম বিধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়েছে সরকার।
আজ এক ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে রাজধানীর বি ডি মার্গে সাংসদদের জন্য তিনটি টাওয়ারে ৭৬টি ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার দাবি, লাটিয়ান্স দিল্লিতে ৮০ বছরেরও বেশি পুরনো ৮টি বাংলোর জমিতে সমস্ত আধুনিক সুবিধাযুক্ত ওই ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে দু’বছরের মধ্যে এবং আনুমানিক খরচ অনুযায়ী বরাদ্দ অর্থের থেকে প্রায় ১৪% কম টাকায়। তিনি বলেন, “ভোটে জিতে দিল্লিতে আসার পরে বহু সাংসদ প্রথম ছ’মাস, এক বছর থাকার ঘর পান না। তাঁদের থাকতে হয় হোটেলে। সেই বিপুল খরচ এ বার বাঁচবে।” স্পিকারের এই হিসেবের সূত্রেই বিল পাশের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “স্পিকার হিসেবে ওম বিড়লা সংসদে প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহারে দড়। বিতর্কের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিয়েও তাই অনেক বেশি সংখ্যক বিল পাশ করাতে সমর্থ তিনি। তার অন্যতম প্রমাণ সংসদের শেষ অধিবেশন। করোনা কালের প্রবল চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেখানে পাশ করানো সম্ভব হয়েছে কৃষি বিল, শ্রম বিধি সমেত বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল।” মোদীর দাবি, ২০১৪-২০১৯ সালের ষোড়শ লোকসভায় ১৫ শতাংশ বিল বেশি পাশ হয়েছিল। বর্তমান অর্থাৎ সপ্তদশ লোকসভায় কাজ হয়েছে ১৩৫ শতাংশ। নতুন ও মহিলা সাংসদের সংখ্যা বৃদ্ধিও মানসিকতায় এই বদলের অন্যতম কারণ বলে তাঁর দাবি।
বিরোধীদের বক্তব্য, সংসদ চলাকালীনও বার বার বিল পাশের সংখ্যার খতিয়ান পেশ করে তাকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরত সরকার। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, সেই সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে কাটছাঁট করা হচ্ছে বিতর্কে। বার বার আবেদন সত্ত্বেও কিছু বিলকে পাঠানো হচ্ছে না সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছেও। প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী যেখানে বিতর্কের গুণমানে আপস না-করার দাবি করছেন, সেখানে কৃষি বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভোটাভুটিতে অমন তাড়াহুড়ো হয় কী ভাবে? কী করেই বা বিরোধীশূন্য কক্ষে পাশ করানো হয় কোটি-কোটি কর্মীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে থাকা তিন শ্রম বিধি?
বিরোধীদের নিশানা করে মোদী এ দিন বলেছেন, সমস্যা ফেলে না-রেখে তার সমাধান খোঁজাই একমাত্র পথ। বর্তমান সরকার তা করে বলেই গত কয়েক বছরে তৈরি হয়েছে অম্বেডকর মেমোরিয়াল, কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের দফতর, ওয়ার মেমোরিয়াল ইত্যাদি। তাঁর দাবি, জীবন গঠনের ক্ষেত্রে যেমন ১৬-১৭-১৮ বছর বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষেও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে ষোড়শ, সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ লোকসভা। চলতি (সপ্তদশ) এবং আগামী (অষ্টাদশ) লোকসভায় ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়া থেকে শুরু করে বহু কাজ এখনও বাকি বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন, তবে কি এখন থেকেই পরবর্তী লোকসভায় নিজের বাকি থাকা কাজের কথা বলতে শুরু করলেন মোদী? বার্তা দিতে শুরু করলেন যে, ‘আত্মনির্ভর সোনার ভারত’ গড়তে আর একটি পাঁচ বছরের মেয়াদ তাঁর প্রয়োজন? এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, “বয়স পঁচাত্তর ছুঁতেই দলের বহু প্রবীণ নেতাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে মার্গদর্শক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জুটি। নিজের বেলায় সেই রীতি মোদী মানবেন তো?”