সিংঘু সীমানায় কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভে এক রাশ দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগও। অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আইন প্রত্যাহারের। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
এমনিতে পারস্পরিক সম্পর্কে যত সন্দেহ আর অবিশ্বাসই দানা বেঁধে থাকুক, অন্তত কৃষক আন্দোলনের তাগিদে কিছুটা মুছে যাচ্ছে জাঠ আর মুসলিমের ভেদাভেদ। সামান্য হলেও পিছনে চলে যাচ্ছে ঠাকুর বনাম দলিত লড়াই। জাত-ধর্ম ভিত্তিক পরিচিতি মুছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে কৃষকেরা যে ভাবে এককাট্টা হচ্ছেন, তাতে আশার আলো দেখছে বিরোধী শিবির। তাদের ধারণা, এই মনোভাব ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোট পর্যন্ত বজায় থাকলে, বড় বিপদ অপেক্ষা করবে বিজেপির সামনে।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে চাষিদের এই ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে অজিত সিংহ-জয়ন্ত চৌধুরির রাষ্ট্রীয় লোক দল আগেই মাঠে নেমেছে। হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে একের পর এক কিসান মহাপঞ্চায়েতে ভিড় উপচে পড়ছে। এত দিন রাষ্ট্রীয় লোক দল, সমাজবাদী পার্টির নেতারা সেখানে যাচ্ছিলেন। এ বার মাঠে নামছে কংগ্রেসও। বুধবার প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা সাহারানপুরের কিসান মহাপঞ্চায়েতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এআইসিসি-তে উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রিয়ঙ্কা শনিবার বিজনৌর ও মুজফ্ফরনগরের কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকও করতে পারেন।
সোমবার রাজ্যসভায় প্রতিবাদী কৃষক নেতাদের ‘আন্দোলনজীবী’ বলে এ দিন সংসদের ভিতরে ও বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভায় সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘আন্দোলনের মাধ্যমেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, মহাত্মা গাঁধী জাতির জনকের পরিচিতি পেয়েছেন।’’ বিজেপি-আরএসএসের রামমন্দিরের জন্য চাঁদা সংগ্রহের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনজীবী বলা হচ্ছে। তা হলে যারা চাঁদা তুলছেন, তাঁদের কী বলব? চাঁদাজীবী?’’
কৃষক নেতাদের মতে, মোদী আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করায় বিক্ষোভ আরও জোরদার হবে। বুধবার দিল্লির সিংঘু সীমানায় আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে সংযুক্ত কিসান মোর্চার বৈঠক বসবে। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে কিসান মহাপঞ্চায়েত থেকে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘লালকৃষ্ণ আডবাণী আন্দোলন করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোনও দিন তা করেননি। উনি আন্দোলনজীবীদের বিষয়ে কী জানেন?’’ কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘কর্পোরেটজীবী সরকারের হয়ে কৃষকদের আন্দোলনজীবী বলা লজ্জাজনক।’’
আজ যুব কংগ্রেস তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যন্তর-মন্তরে জমায়েত করে সংসদ অভিযানের ডাক দিয়েছিল। পঞ্জাবের কংগ্রেস সাংসদরা আইন প্রত্যাহারের জন্য প্রাইভেট মেম্বার্স বিল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন। তাঁরা লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত তা পেশ করার দাবি জানিয়েছেন। পঞ্জাবে বিজেপি নেতারা রোজই কৃষকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। আজও কিছু জায়গায় বিজেপির অফিস বন্ধ করা হয়েছে। ফিরোজ়পুরে কৃষকদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন বিজেপি নেতা অশ্বিনী শর্মা।