—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নেট-এর পর নিট। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বুধবার সন্ধ্যায় ‘গবেষণার প্রবেশদ্বার’ ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট) বাতিল করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধী দলগুলি।
বুধবার রাতেই নেট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সেখানে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নেট-এর পাশাপাশি নিট পরীক্ষার অনিয়ম নিয়েও কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। হিন্দিতে খড়্গে লেখেন, “নরেন্দ্র মোদীজি, আপনি পরীক্ষা নিয়ে অনেক চর্চা (আলোচনা) করেছেন। কিন্তু আপনি নেট পরীক্ষা পে চর্চাটা কখন করছেন?” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ইউজিসি নেট বাতিল লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার আবেগকে ধাক্কা দিয়েছে।” নেটের পর ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট কবে বাতিল হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
কংগ্রেসের অভিযোগ, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বিজপি। দলের এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, “গত কাল (মঙ্গলবার) দেশের বিভিন্ন শহরে ইউজিসি নেট পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। আর বুধবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সেই পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল। প্রথমে নিট, তার পর নেট-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস হল। মোদী সরকার আসলে প্রশ্নফাঁসের সরকার হয়ে উঠেছে।”
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল এসপি-র প্রধান অখিলেশ যাদবের বক্তব্য, বিজেপির শাসনে প্রতিটি বড় পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের চক্রীরা সক্রিয় হচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে এটিকে ‘বড় চক্রান্ত’ বলেও অভিহিত করেন অখিলেশ। আর এক বিরোধী দল শিবসেনা (ইউবিটি)-র বক্তব্য, গোটা দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় ‘জরুরি অবস্থা’ চলছে। উদ্ধব ঠাকরের দলের আরও বক্তব্য, পরীক্ষা বাতিল কোনও সমাধান নয়। বরং সরকারের তরফে স্বচ্ছতা এবং পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার উপরেই জোর দিচ্ছে তারা। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই আবার পরীক্ষা বাতিল না করে জাতীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা (ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ)-কেই বাতিল করার দাবি তুলেছে।
তৃণমূলের তরফে সরাসরি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের ইস্তফা দাবি করা হয়েছে। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “এনডিএ সরকারের আমলে প্রতি দিন পড়ুয়াদের জীবন এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। তবু লজ্জাজনক ভাবে সরকার কোনও দায় নিচ্ছে না।” তার পরেই সাকেত জানান, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে যাওয়া উচিত। মোদী নির্বাচনে ধাক্কা খেয়েও কোনও শিক্ষা নেননি বলে দাবি করেছেন এই তৃণমূল নেতা।
গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) দু’টি অর্ধে নেট পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রায় ৯ লক্ষ শিক্ষার্থী। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (১৪সি)-এর জাতীয় সাইবার ক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটিক্স ইউনিট থেকে পাওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষায় ‘প্রশ্ন ফাঁস’ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি নজরে এসেছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। তার পরেই মন্ত্রকের কাছে পরীক্ষা বাতিলের বার্তা পাঠায় আয়োজক সংস্থা ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি’ (এনটিএ)। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের সূত্র উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, ওই অনিয়ম সংক্রান্ত তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই জুন এবং ডিসেম্বর মাসে ইউজিসি নেট পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকে জাতীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা (এনটিএ)। এটি ‘জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রদান এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা। এ বছর জুন পর্বের ইউজিসি নেট হওয়ার কথা ছিল ১৬ জুন। তবে গত মাসের শেষে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় বিশেষ কারণবশত পরীক্ষার দিন পিছিয়ে ১৮ জুন করা হবে। দেশের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে ওই দিন দু’টি অর্ধে ‘ওএমআর’ শিটের মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল।