মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।
সমস্ত কাজ বন্ধ রেখে জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনা এবং তাতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির দাবি গত কালই নাকচ করে দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। আজও দাবি নতুন ছিল না। কিন্তু যেটা নতুনত্ব, তা হল ধনখড়ই দীর্ঘ এক বক্তৃতা দিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের আসন থেকে। বিরোধীরা তাঁদের দাবিতে অনড় থেকে হইচই করে কক্ষত্যাগ করার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে কার্যত ভৎর্সনা করলেন ধনখড়। প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দেওয়ার জন্য বাধ্য করা যে তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না, জানালেন সে কথাও।
অন্য দিকে, কক্ষত্যাগ করে ‘ইন্ডিয়া’ শীর্ষক জোটের নেতারা বিজয় চকে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন। সাংবাদিক বৈঠকে নিজে থেকেই সঞ্চালকের ভূমিকা নিতে দেখা গেল ডেরেককে। বললেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। পরে জানানো হয়, আগামিকাল সকাল সাড়ে এগারোটার সময়ে মণিপুর নিয়ে ইন্ডিয়া-র প্রতিনিধি দল দেখা করবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে। সেই প্রতিনিধি দলে থাকবেন মোট ৩৩ জন সাংসদ। তাঁদের মধ্যে থাকবেন সেই ২১ জন, যাঁরা মণিপুর ঘুরে এসেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে মণিপুরের পরিস্থিতি তুলে ধরবেন তাঁরা।
রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর- বিতর্কে যোগ না দেওয়া নিয়ে আজ সকাল থেকেই বিরোধীরা পালা করে আক্রমণ শানিয়েছেন। ডেরেক আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর যদি মনমোহন সিংহকে অনুসরণ করতে সমস্যা থাকে, তা হলে তিনি বাজপেয়ীর উদাহরণে কেন অনুপ্রাণিত হবেন না? বাজপেয়ী ২০০০ থেকে ২০০৩, বার বার সংসদ অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয়ে কবে কী বক্তৃতা দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গ তুলে ডেরেকের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী, আপনি কেন সংসদ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন?” অন্য দিকে কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ২০০২ সালে রাজ্যসভার একটি উদাহরণ তুলে বলেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি চেয়ে ইন্ডিয়া-র দলগুলির দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা মনে করে দেখুন, ২০০২ সালের মে মাসে কংগ্রেস সাংসদ অর্জুন সিংহের আনা গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবে পূর্ণ আলোচনা হয়েছিল। বিরোধীদের মতে, ২০০২ সালের দাঙ্গার সময়ে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘রাজধর্ম’ পালন করতে বলেছিলেন বাজপেয়ী। সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়াও ‘রাজধর্মে’র মধ্যে পড়ে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে খড়্গের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে, ভয় দেখাচ্ছে। তাঁদের সংসদে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না, মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’
আজ রাজ্যসভায় সকালে ডেরেক গোলমালের মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, সংসদ নিয়মমাফিক চলছে কি না, তা নিয়ে তাঁর একটি বক্তব্য (পয়েন্ট অব অর্ডার) রয়েছে। ধনখড় তাঁকে বলতে বলেন। ডেরেক বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাকে বলতে দেওয়া হোক। চেয়ারম্যান কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলেন, ‘‘এটা কী ধরনের পয়েন্ট অব অর্ডার?’’ এর পরে প্রতিবাদের জেরে কক্ষত্যাগ করেন বিরোধীরা। বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় দীর্ঘ বক্তৃতা দিতে দেখা যায় ধনখড়কে। তিনি বলেন, ‘‘ডেরেক ও’ব্রায়েন একসঙ্গে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে খাটো করলেন। প্রথমত তিনি প্রধান বিরোধী নেতাকে খাটো করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, তাঁর নিজের বলার ক্ষমতা নেই, অন্যের সাহায্য নিতে হয়। দ্বিতীয়ত এই চেয়ারকে। তিনি
আমার সঙ্গে রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী দলনেতার মধ্যস্থতা করতে চাইলেন। যেটা কোনও সাংসদের করার কথা নয়।’’