ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় হতেই পাল্টা মাঠে নামলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ বিজেপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদে সর্বসম্মত প্রার্থী বেছে নেওয়ার লক্ষ্যে এনডিএ শরিক দল ছাড়াও ইউপিএ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ও শীর্ষ নেতা রাজনাথ সিংহকে। মমতার ১৫ জুনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের নাম প্রস্তাব করা হতে পারে। কংগ্রেস সূত্রের মতে, মহারাষ্ট্রের ওই বর্ষীয়ান নেতার নামে আপত্তি নেই তাদের।
মমতার আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পরে প্রায় এক দিন কেটে যাওয়ার পরেও নিজেদের অবস্থান নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছে কংগ্রেস। এমনকি ১৫ জুনের বৈঠকে দলের কেউ থাকবেন কি না, তা নিয়েও দল নীরব। দলীয় সূত্রের মতে, এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদের জন্য কোনও নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি কংগ্রেসে। কারণ দল এখন বেশি ব্যস্ত আগামিকালের রাহুল গান্ধীর ইডি-র হাজিরা নিয়ে। তবে একই সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে সকলকে। দল চায় এমন এক জন রাষ্ট্রপতিকে বেছে নেওয়া হোক, যিনি সংবিধানকে রক্ষা করতে সক্ষম হবেন। রাজনীতির অনেকের মতে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোটের ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেওয়ার প্রশ্নে কংগ্রেস যে দরজা খোলা রেখেছে, সেই বার্তা দিতে চেয়েছে দল। সনিয়া গান্ধী নিজে অসুস্থ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন মল্লিকার্জ্জুন খড়্গেকে। কংগ্রেস জানিয়েছে, আজ বেশ কিছু বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে খড়্গের। সূত্রের দাবি, এখনও তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়নি খড়্গের।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে মমতার উদ্যোগ কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে বিরোধী শিবিরকে। বাম শিবিরের মতে, যদি প্রথম বারেই বিরোধী শিবিরের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে লাভ হবে বিজেপিরই। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা দাবি, কাউকে তো ওই উদ্যোগ নিতেই হত। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা ১৪ জুন দিল্লি আসছেন। ১৫ জুন বিকালে কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরের দিন কলকাতা ফিরে যাবেন তিনি। মমতা শিবিরের বক্তব্য, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিদের কথা হয়েছে। দল আশা করছে, বৈঠকে দু’জনেই উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, এম কে স্ট্যালিন, এইচ ডি দেবগৌড়া, অখিলেশ যাদব এবং লালু প্রসাদের দলের সঙ্গে কথা হয়েছে মমতার। আসতে পারেন লালুর ছেলে তেজস্বী যাদব। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের সঙ্গে কথা হয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। হেমন্তের দলের প্রতিনিধিও থাকতে পারেন বৈঠকে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের পক্ষে তৃণমূলকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত দলের কোনও প্রতিনিধি যদি না-ও যেতে পারেন, তা হলেও আপ তৃণমূলের পাশে রয়েছে। আপ সূত্রের মতে, কেজরীওয়াল নিজে না গেলেও উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে ওই বৈঠকে পাঠাতে পারেন। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত তৃণমূলকে জানিয়েছেন, ওই দিন উদ্ধব ঠাকরে অযোধ্যায় থাকবেন। তাই তিনি না এলেও দলের কোনও বড় মাপের নেতা বৈঠকে যাবেন। পওয়ার নিজে না গেলেও মেয়ে তথা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বা প্রফুল্ল পটেলকে পাঠাতে পারেন। আসতে পারেন রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা জয়ন্ত চৌধরি। তবে তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক বা ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন রেড্ডি বা তাঁদের দলের কোনও নেতার বৈঠকে আসার সম্ভাবনা কম। সম্ভবত আসবেন না কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলের প্রতিনিধিও। উত্তরপ্রদেশে বিরোধীদের মধ্যে সপা প্রতিনিধিত্ব পাঠানোর আশ্বাস দিলেও মায়াবতীর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ হয়নি তৃণমূলের। সিপিএম-সিপিআই বৈঠকে আসবে না বলে মনে করছে তৃণমূল।
সূত্রের মতে, বৈঠকে সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে শরদ পওয়ারের নাম প্রস্তাব করতে পারে তৃণমূল। দল মনে করছে, পওয়ারের মতো ওজনদার নেতাকে প্রার্থী করা হলে অন্য বিরোধী দলগুলির পক্ষে তা প্রত্যাখ্যান করা কঠিন। কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, পওয়ারের নামে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। অনেকের মতে, পওয়ারকে প্রার্থী করা হলে বিজেপির পক্ষে তাঁর বিরোধিতা করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়বে। তবে পওয়ার নিজে দাঁড়াতে রাজি না হলে সে ক্ষেত্রে মুসলিম প্রার্থী হিসাবে ফারুক আবদুল্লার নামও ভেবে রাখা হয়েছে। দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়াও।
বিরোধী শিবির সক্রিয় হতেই আজ পাল্টা মাঠে নেমেছে বিজেপি। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রশ্নে এনডিএ-এর চেয়ে অঙ্কের হিসাবে প্রায় দুই শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিরোধীরা। তাই বিজেপির লক্ষ্যই হল এমন কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নেওয়া, যিনি সর্বসম্মত প্রার্থী হবেন এবং যাঁকে সামনে রেখে ভোটাভুটি এড়ানো যাবে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সেই কারণে আলোচনার প্রশ্নে রাজনাথ সিংহকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যিনি বিজেপি নেতা হলেও কট্টরপন্থী নন। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিরোধীদের মন পেতে রাজনাথের উপরেই ভরসা করছে দল।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।