ফাইল চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংশোধন।
বিজেপি এ বার সঙ্ঘ পরিবারের বাকি কর্মসূচি রূপায়ণের দিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে বিরোধী শিবির।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই মোদী সরকার তিন তালাক নিষিদ্ধ করা, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ অধিকারের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ রদ করা, রামমন্দির নির্মাণ, নতুন শিক্ষানীতির মতো সঙ্ঘ পরিবারের কর্মসূচি একের পর এক রূপায়ণ করছে বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে। বাকি রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইনের মতো পরিকল্পনা। এ বার তারও প্রস্তুতির ইঙ্গিত মিলল।
মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, নতুন আইন কমিশন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। নিশিকান্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করার দাবি তুলেছিলেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে সব ধর্মের মানুষের জন্য একই রকম পারিবারিক, বিবাহ, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন মানার কথা। ফলে মুসলিমদের শরিয়ত অনুযায়ী ব্যক্তি আইনের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। বিজেপির ২০১৯-এর ইস্তাহারেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলা ছিল। রিজিজু জানিয়েছেন, ২১তম আইন কমিশনের মেয়াদ ২০১৮-য় শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন আইন কমিশন গঠন হলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বিজেপি সাংসদ কিরোরীমল মিনা রাজ্যসভায় এ নিয়ে প্রাইভেট মেম্বার্স বিল বা অসরকারি বিল আনার নোটিস দিয়েছেন। আজ সিপিএমের সাংসদ এলামরম করিম এর বিরোধিতা করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে চিঠি দিয়েছেন। করিমের যুক্তি, এই বিল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরোধী। এই রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও আলোচনা দরকার। বিজেপি সাংসদ কিছু না-ভেবে তাড়াহুড়োয় একটি বিল তৈরি করে সংসদে পেশ করতে চাইছেন। তার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। সংবিধান পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও তা ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়। বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে, গোপন উদ্দেশ্যে এই বিল নিয়ে আসা হচ্ছে।
আজ রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিন্হা প্রাইভেট মেম্বার্স বিল বা অসরকারি বিল হিসেবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে এসেছেন। তাতে সর্বাধিক দু’টি সন্তানের নীতি তৈরি করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। কংগ্রেসের এল হনুমন্থাইয়া ও এনসিপি-র ফউজিয়া খান এর জোরদার বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই বিলও বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করে তৈরি করা হয়েছে। একে কোণঠাসা মানুষকে আরও কোণঠাসা করে ফেলা হবে। ফউজিয়া বলেন, ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে মহিলারা সবথেকে বেশি ভুক্তভোগী হবেন। বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অসরকারি বিল সংসদে পাশ হলে তাকেও আইনের তকমা দেওয়া যায়।
কেরলের বিজেপি সাংসদ কে জে আলফোন্স সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধনের জন্যও একই ভাবে অসরকারি বিল নিয়ে আসতে চেয়েছেন। আজ তারও জোরালো বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি, বাম সাংসদরা। আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা আগেই বিল পেশের বিরোধিতা করে নোটিস দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা আজ বলেন, সংবিধান আগেও সংশোধন হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বদলের কথা বলা হচ্ছে। বিজেডি-র অমর পট্টনায়ক যুক্তি দেন, এর আগে সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই সংশোধন করে সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ ঢোকানো হয়েছিল। তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সংসদের সার্বভৌমত্ব থাকবে। কিন্তু সংবিধান যে সকলের উপরে, তা নাকচ করা যাবে না। সংসদ বা
অন্য প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান মেনে চলতে হবে।