এই ছবিই টুইট করেছে কংগ্রেস।
এ ভাবেও ফিরে আসা যায়। টুইট-ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে আবার নির্মলা ‘তাই’, অর্থাৎ নির্মলা দিদি। ‘মিলেনিয়াল’-পর্বের পরে আবার সবাই বলছেন, #সেইটলাইকনির্মলাতাই— সবাই নির্মলা দিদির মতো বলো!
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার জানিয়েছেন, তিনি পেঁয়াজ-রসুন খান না। তাঁর এই ‘যুক্তি’ শুনেই জোর তামাশা সমাজমাধ্যমে। বৃহস্পতিবার সংসদ চত্বরে নির্মলার মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘উনি কি অ্যাভোকাডো খান?’’
বুধবার সংসদে বিতর্কের সময় অর্থমন্ত্রী জানান, ফলন খুব কম হয়েছে বলে মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বিরোধী সাংসদ তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি মিশরের পেঁয়াজ খান?’’ নির্মলা বলেন, ‘‘পেঁয়াজ, রসুন খাই না বললেই চলে। তাই আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, সেখানে পেঁয়াজের চল নেই।’’ ভাইরাল হয়ে যায় নির্মলার বক্তব্যের ভিডিয়োও। ব্যঙ্গ শুরু হয়। তাতে অবশ্য দমেননি নির্মলার সহকর্মী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে। এ দিন সংসদ চত্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিরামিষাশী। পেঁয়াজের স্বাদই জানি না। আমার মতো একজন পেঁয়াজের দরদাম কী করে জানবে?’’ তবে দিনভর চর্চায় ছিলেন নির্মলাই।
মাস আড়াই আগে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার দায় ‘মিলেনিয়াল’ অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের ঘাড়ে চাপিয়ে ছিলেন নির্মলা। তখনই ভাইরাল হয় হ্যাশট্যাগ #সেইটলাইকনির্মলাতাই। বৃহস্পতিবার তা ফিরে আসে। নেটিজ়েনের কেউ বলেন, ‘‘পেট্রোলের দাম বাড়লে আমার কী? আমার গাড়ি তো ডিজেলে চলে!’’ আর একজন লেখেন, ‘‘নবম শ্রেণির ছাত্র বলবে, আমি বায়োলজি কেন পড়ব? আমি তো ডাক্তার হব না।’’ কারও কটাক্ষ, ‘‘পেঁয়াজের স্বাদ আর অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক হল, দুটোই আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছে অজানা।’’
ব্যঙ্গ করেছে কংগ্রেসও। দলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একাধিক পোস্ট শেয়ার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবির তলায় লেখা হয়, ‘‘আমি ভোটের পরোয়া করি না, কারণ আমি বিধায়কদের কিনে নিই।’’ ছাড় পাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তাঁর বিদেশযাত্রাকে কটাক্ষ করতে মোদীর ছবি দিয়ে কংগ্রেস লেখে, ‘‘আমি দিল্লির দূষণের পরোয়া করি না, কারণ আমি এখানে থাকিই না।’’ ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রানি মেরি আঁতোয়ানেত বলেছিলেন লোকে রুটি না পেলে কেক খাক। সেই আঁতোয়ানেত ও নির্মলার ছবি পাশাপাশি রেখে মিম বানায় কংগ্রেস। তাতে রানির ছবির তলায় লেখা, ‘‘ওরা কেক খাক’’ আর নির্মলার ছবির তলায় লেখা ‘‘ওরা অ্যাভোকাডো খাক।’’ তবে অ্যাভোকাডো নিয়ে তাঁর মন্তব্য ‘কটাক্ষ’ নয় বলেই এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন চিদম্বরম। তিনি বলেন, ‘‘ব্যঙ্গ করিনি। ওঁকে উদ্ধৃত করেছি মাত্র।’’ চিদম্বরম প্রশ্ন করেন, ‘‘এখন পেঁয়াজ আমদানির মানে কী? সেই পেঁয়াজ পৌঁছবে কবে?’’ সরকারকে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যদি অর্থমন্ত্রী নিজে বলেন আমি পেঁয়াজ খাই না, তাহলে তা সরকারের মনোভাবকেই প্রকাশ করে।’’
অতীত টেনে চিদম্বরমকে আক্রমণের পথে হাঁটেন নির্মলাও। এ দিন নাম না করে রাজ্যসভায় নির্মলা পাল্টা বলেন, ‘‘২০১২ সালের মূল্যবৃদ্ধির সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন শহুরে মধ্যবিত্ত যদি ১৫ টাকা দিয়ে জলের বোতল কিনতে পারে, তাহলে জিনিসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এত হইচই কেন? এঁরাই আবার আমাকে, এই সরকারকে বড়লোকদের সরকার বলেন। আমি এর বিরোধিতা করছি।’’ বিরোধীরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বদলে পুরনো কথা টেনে এনে কী লাভ? টুইটারে ভেসে উঠেছে নির্মলার ২০১৩-সালের একটি টুইট। যাতে তিনি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করেছিলেন। সেই টুইটের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘উনি যখন বিরোধী থাকেন, শুধু তখনই পেঁয়াজ খান।’’