শিশু-নিখোঁজ বাড়ছে, উদ্ধার ২৬ শতাংশ

অসমে নিখোঁজ হওয়া শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও কম শিশুকে উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেবেই মিলেছে এই তথ্য। দেশের হারানো শিশুদের তথ্য-সহ ‘ট্র্যাক চাইল্ড পোর্টাল’ চালু করেছে সরকার।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

অসমে নিখোঁজ হওয়া শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও কম শিশুকে উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেবেই মিলেছে এই তথ্য। দেশের হারানো শিশুদের তথ্য-সহ ‘ট্র্যাক চাইল্ড পোর্টাল’ চালু করেছে সরকার। সেই পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত অসম থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশুর সংখ্যা ২৭৪৬ জন। তার মধ্যে ২০২৬ জন শিশু এখনও নিখোঁজ। উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ৭২০ জনকে। অর্থাৎ ২৬.২১ শতাংশ।

Advertisement

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করে যে সব সংগঠন, তাদের মতে, নিখোঁজ শিশু উদ্ধারের ঘটনা কম হওয়ার কারণ, বেশির ভাগ শিশু ভিন রাজ্যে পাচার হয়ে যায়। রাজ্য পুলিশের এক্তিয়ার বহির্ভূত ক্ষেত্রে তদন্ত চালাতে বিভিন্ন সমস্যা হয়। দক্ষিণ ভারত, রাজস্থান বা হরিয়ানার গ্রামে পাচার হওয়া বাচ্চাদের সন্ধান মেলা ও তাদের উদ্ধার করা রাজ্য পুলিশের কাছে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি মেয়ে পাচার হচ্ছে হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থানে। এই ধরণের তদন্তে লাগাতার বাইরের রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সিডব্লুসি, পুলিশ ও চাইল্ডলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে হয়। কিন্তু রাজ্য পুলিশের বড় অংশ ব্যস্ত থাকে ভিআইপি ডিউটিতে। আছে নাশকতা, দৈনন্দিন আইন-শৃঙ্খলা, অপরাধ দমনের মতো কাজ। তাই পুলিশের কাছে বাইরের রাজ্যে পাচার হওয়া বাচ্চাদের উদ্ধার করে আনা, গুরুত্বের বিচারের অনেক পরে আসে।

চাইল্ডলাইন বা কৈলাশ সত্যার্থীর সংগঠনের কর্মীদের মতে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি শিশুদের খবর এনে দেয়। তাদের উদ্ধারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। রাজ্য পুলিশকে শুধু আইন মেনে তাদের অসমে ফিরিয়ে আনতে হয়। তাতেও সময় লাগে অনেক। পুলিশ সূত্রে খবর, কোন থানার কোন অফিসার ভিন রাজ্যে যাবেন, তাঁর থাকা-খাওয়া-যাওয়ার খরচ কত দিনে তিনি ফেরত পাবেন, এই সব নিয়েই জটিলতা থাকেই।

Advertisement

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন রুনুমি গগৈ নিখোঁজ শিশু উদ্ধার না হওয়ার ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। তাঁর আশঙ্কা, নথিভুক্ত নিখোঁজ শিশুর চেয়েও বাস্তবে পাচার হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেশি হতে পারে। কারণ, গ্রামের দিকে অনেক দরিদ্র বাবা-মা স্বেচ্ছায় অচেনা সংগঠনের হাতে বাচ্চা তুলে দেন। তাদের পরে খবর মেলে না। থানাতেও আসে না ওই পরিবার। শিশু নিখোঁজের ঘটনার মাত্র ৫০ শতাংশ থানায় আসে বলে চাইল্ডলাইন সূত্রে খবর।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেবে: গত বছর রাজ্য থেকে উধাও শিশুদের মধ্যে ৫৫৬টি ছেলে ও ৮৭৩টি মেয়ে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেলা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মোট ২০০০ ছেলে ও ৩০৩৮টি মেয়ে রাজ্য থেকে নিখোঁজ হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৬৯৮ টি ছেলে ও ৪৩৯টি মেয়ে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেলা সরকারি হিসেব দেখা যাচ্ছে, অসম থেকে নিখোঁজ ২৭৪৬ জনের মধ্যে ৭২০ জন, অরুণাচল থেকে নিখোঁজ ৭৪২ জনের মধ্যে ৫০৮ জন, মেঘালয়ে ৪৯১ জনের মধ্যে ৪২১ জন, মিজোরামে ১০ জনের মধ্যে ৯ জন, নাগাল্যান্ড থেকে নিখোঁজ ৫৭ জনের মধ্যে ২৩ জন, ত্রিপুরায় নিখোঁজ ৫০ জনের মধ্যে সাত জন উদ্ধার হয়েছে। মণিপুর থেকে শিশু হারানোর ঘটনা অনেক ঘটে। কিন্তু পোর্টালে সে রাজ্যের কোনও তথ্যই নেই।

গগৈয়ের মতে, নাবালিকাদের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ পাচার। পাশাপাশি প্রেম করে পালানো বা বাড়ির খারাপ পরিবেশ বা পরিবারের অত্যাচারে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। একেবারে ছোট শিশুদের অনেকে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পাচার হওয়া ও শিশু নিখোঁজের ঘটনা রুখতে রেল কর্তৃপক্ষ ও আরপিএফের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। সব স্টেশনে চাইল্ড হেল্পডেস্ক রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

আরপিএফের মতে, স্টেশন থেকে অনেক পাচারকারী ধরা পড়ে। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের পরিবার এসে জানায়, তারা স্বেচ্ছায় বাচ্চাদের পাঠাচ্ছিল। কখনও মামলা চালানোর মতো পর্যাপ্ত প্রমাণও পুলিশের হাতে থাকে না। তাই সিংহভাগ ক্ষেত্রে পাচারকারীরা ছাড়া পেয়ে যায়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৬৩৭ জন পাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। মামলা হয়েছে ৬১৫টি। কিন্তু তার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র সাত জনের। অথচ চার্জশিট ছিল ১৬৯ জনের নামে। অর্থাৎ বাকি ১৬২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের হাতে পোক্ত প্রমাণই ছিল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement