Election Commission

প্রার্থী লড়ুন এক আসনে, সুপারিশ কমিশনের

প্রায় ১৮ বছর পরে ফের একই সুপারিশ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে পাঠাল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে ওই সুপারিশ করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪৪
Share:

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে শুধু একটি আসনেই লড়ুন প্রার্থীরা। ফাইল ছবি

লোকসভা হোক কিংবা বিধানসভা, এক জন প্রার্থী লড়ুন শুধু একটি আসন থেকেই। প্রায় ১৮ বছর পরে ফের একই সুপারিশ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে পাঠাল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে ওই সুপারিশ করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

বর্তমানে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৩৩ (৭) নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও এক জন প্রার্থী একই সঙ্গে দু’টি আসন থেকে লড়তে পারেন। নির্বাচনে প্রার্থী যদি দু’টি আসনেই জেতেন, তাঁকে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। এ বার সেই নিয়মেই পরিবর্তন চাইছেন কমিশন কর্তারা। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে শুধু একটি আসনেই লড়ুন প্রার্থীরা। তবে এই প্রস্তাব নতুন নয়। ২০০৪ সালে প্রথম বার কমিশনের তরফে কেন্দ্রের কাছে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের মতে, সম্প্রতি ওই বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রকে খতিয়ে দেখতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরে ফের ওই সুপারিশ নরেন্দ্র মোদী সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। কমিশনের ওই প্রস্তাব কেন্দ্র মেনে নিলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধনের প্রয়োজন হবে।

১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কোনও প্রার্থী সর্বাধিক তিনটি আসনে লড়তে পারতেন। পরে তা কমিয়ে আনা হয় দু’টি আসনে। অতীতে ইন্দিরা গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, পরে হাল আমলে নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধীদের একাধিক আসনে লড়তে দেখা গিয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের বরোদা ও উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে লড়েছিলেন। দু’টি কেন্দ্রেই জয়লাভ করায় পরে বরোদা আসনটি ছেড়ে দেন মোদী। পাঁচ বছর পরের নির্বাচনে মোদী কেবল বারাণসী থেকে লড়লেও, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী উত্তরপ্রদেশের অমেঠী ও কেরলের ওয়েনাড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অমেঠী থেকে হেরে গেলেও ওয়েনাডে জিতে সাংসদ পদ ধরে রাখেন রাহুল।

Advertisement

আইন মন্ত্রকে পাঠানো ওই সুপারিশের পিছনে কমিশনের যুক্তি, কোনও প্রার্থী দু’টি আসনে লড়ে দু’টিতেই জিতলে জয়ী প্রার্থীকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হয়। ফলে সেই কেন্দ্রে উপনির্বাচন করাতে হয়। যদিও ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন করার খরচের একাংশ বিজয়ী প্রার্থীকে বহন করতে হয়, তবু উপনির্বাচনের পিছনে সরকারের অহেতুক বাড়তি অর্থ খরচ হয়। পাশাপাশি কোনও একটি কেন্দ্রে জয়ী প্রার্থীর ইস্তফা দেওয়া পরোক্ষে সেই কেন্দ্রের ভোটারদের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে করছেন কমিশন কর্তারা। তা ছাড়া, অধিকাংশ উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছে ভোটদানের হার মূল ভোটের চেয়ে অনেকাংশে কম হয়। একটি লোকসভা বা বিধানসভার নির্বাচনের লক্ষ্য এক জন জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেওয়া। উপনির্বাচনে কম ভোটদানের হার সেই উদ্দেশ্যকে অনেকাংশে ব্যাহত করে বলেই মনে করছেন কমিশন কর্তারা। তাই সব দিক বিবেচনা করে এক জন প্রার্থীর একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুপারিশ ফের করা হয়েছে বলেই কমিশন কর্তাদের মত।

তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘কমিশনের যুক্তিতে সারবত্তা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই নির্বাচনী সংস্কারের লক্ষ্যে সরব। কিন্তু গণতন্ত্রের মূল বিষয়টি হল আলোচনা। তাই এ ভাবে খুচরো সংস্কার না করে কমিশন কর্তাদের উচিত সব রাজনৈতিক দল, সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে সামগ্রিক আলোচনায় বসা। তবেই সার্বিক ভাবে সংস্কার হতে পারে।’’ তবে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। কমিশন নিজের আওতার বাইরে গিয়ে সুপারিশ করছে। বিজেপির যে ইচ্ছে, তা পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। পিএম কেয়ার্সের কত টাকা নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছে, তা বরং খতিয়ে দেখুক কমিশন।’’

সিপিএমের নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আরও খতিয়ে দেখে তবেই বলা সম্ভব। তবে এটুকু বলা যায়, নির্বাচন কমিশন তাদের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করার পরিবর্তে বাকি সব বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে কিছু দল বাড়তি ফায়দা পাচ্ছে। কমিশন এ নিয়ে একেবারে চুপ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement