গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী অর্থবর্ষে দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য আরও উজ্জ্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিল অর্থনৈতিক সমীক্ষা। শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাব লোকসভায় পেশ হওয়ার প্রাক মুহূর্তে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা (২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষ) জানাল, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমবে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ফলে, তেল আমদানির ‘হাতির বোঝা’ অনেকটাই কমবে। যার জেরে দেশে পেট্রল, ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানির দাম কমতে পারে। তবে বাড়বে জিডিপি বৃদ্ধির হার।
সমীক্ষার অনুমান, ২০২০ অর্থবর্ষের শেষে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার গিয়ে পৌঁছবে ৭ শতাংশে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে বেসরকারি বিনিয়োগের হারও। বাড়বে ক্রেতাবাজার। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। আর কমবে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ওই সমীক্ষা প্রণয়নের মূল দায়িত্বে ছিলেন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমনিয়ন। পরে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট একটি লিঙ্ক তুলে ধরে বৃহস্পতিবার টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘২০১৯ এর অর্থনৈতিক সমীক্ষা আমাদের কাছে একটি দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এটি সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং শক্তির নিরাপত্তা ক্ষেত্র থেকে লাভগুলিও তুলে ধরেছে।পড়ুন সেগুলি!’’
তবে বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে কিছুটা ভাটার টান আর বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সংঘাতের আবহে ভারতের রফতানি বাণিজ্য কিছুটা হলেও প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা সমীক্ষার। আরও আশঙ্কা, বৃদ্ধির হার না বাড়লে তার প্রভাব পড়তে পারে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণেও।
ছবি: এএফপি
আগামী ৬ বছরের মধ্যে ভারত যাতে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায়, ৩৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) বাজেট বরাদ্দ করার মতো একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে পারে, তারও একটি রূপরেখা দিয়েছে এ বারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা। জানিয়েছে, সেই পথে হাঁটতে গেলে ভারতে বৃদ্ধির হারকে ফি-বছরে পৌঁছতে হবে ৮ শতাংশে।
তাতে জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা অনেকেরই নজর কেড়েছে। কারণ, গত ৩১ মার্চ যে অর্থবর্ষটি শেষ হয়েছে, তাতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন- মাটিতে জল ফিরবে কি, বলবে বাজেটও
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংজ্ঞা বদলে জোর
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিপি বৃদ্ধির হার বেড়ে ৭ শতাংশে পৌঁছলে ভারত ফের চিনকে টপকে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলা অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে পারবে।
সমীক্ষা এও জানিয়েছে, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির গতি আরও বাড়বে। বাড়বে দেশের ক্রেতাবাজারের আয়তন ও ক্ষমতাও। যার মানে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে উত্তরোত্তর। আরও একটি সুখবর, গত কয়েক বছরে যে গ্রামীণ আয়ের পরিমাণ কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। তা আরও বাড়বে আগামী দিনে। যার ফলে, গ্রামীণ বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাবে বলে।
দেশে যে বিনিয়োগের হার উত্তরোত্তর পড়ে যাচ্ছিল গত ২০১১-’১২ সাল থেকে, তা আবার বাড়বে বলেও অর্থনৈতিক সমীক্ষার পূর্বাভাস।
সমীক্ষা জানিয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে (২০১৮-’১৯) রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। সমীক্ষার অনুমান, ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে দেশের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ হবে ৫.৮ শতাংশ। যা আগের অর্থবর্ষে (২০১৭-’১৮) ছিল ৬.৪ শতাংশ।