জ়ওয়াদের জেরে প্রবল বৃষ্টি ভুবনেশ্বরে। রবিবার। ছবি পিটিআই।
সকাল দেখে সব সময়ে দিনের মর্জি বোঝা মুশকিল। রবিবারের জ়ওয়াদ হামলা-নাট্যের শেষে তেমনটাই মনে হচ্ছিল জগন্নাথ ধামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এ দিন বিকেলেই গাড়িতে পুরী থেকে ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন তিনি। বিমানবন্দরে আগরতলা থেকে কলকাতা হয়ে আগত আত্মীয়দের নিয়ে ফেরার কথা ছিল তাঁর। অঞ্জনা বলছিলেন, “সকালেই সন্দেহ ছিল, ওঁরা ঠিকঠাক আসতে পারবেন কি না! ভাবছিলাম, বেশি ঝড়-বৃষ্টি হলে ওঁদের ভুবনেশ্বরেই থেকে যেতে বলব। কিন্তু জয় জগন্নাথ, দেখি কোনও চিন্তা নেই, বিকেল সাড়ে তিনটে থেকেই পুরীর আকাশ হাসছে।” রাতে যখন ওঁরা সবাই মিলে গাড়িতে পুরী ঢুকছেন, তখন বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গিয়েছে। রাস্তায় চলাচলেও বিধিনিষেধ নেই। শুধু সন্ধ্যাতেও সমুদ্রের কাছে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।
রবিবার বলে ইদানীংকালের কোভিড-বিধি মেনে জগন্নাথ-দর্শন অবশ্য এ দিন বন্ধ ছিল পুরীতে। তাতেও কিছুটা স্বস্তিতে স্থানীয় প্রশাসন। জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি এ দিন বলেন, “মনে হচ্ছে, সোমবার থেকে পুরী একদম স্বাভাবিক থাকবে।” তবে তখনও পুরীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিবেগে হাওয়া বয়েছে। গোটা ওড়িশাই সার্থকনামা জ়ওয়াদের ‘উদারতার’ জেরে অবশ্য এ দিন সন্ধ্যা থেকে অনেকটা ছন্দে ফিরেছে। ওড়িশার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার প্রদীপকুমার জেনা এ দিন বিকেলেই জ়ওয়াদজনিত নিম্নচাপের পুরীর দিক থেকে সরে যাওয়ার খবর জানিয়েছেন। ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের টুইটও তিনি ফের পোস্ট করেন।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের মহিমা এই ডিসেম্বরে দেখা না-গেলেও, গোটা ওড়িশাই এ দিন কার্যত বৃষ্টিধ্বস্ত। অনেকেই আশঙ্কায় ছিলেন, সন্ধ্যা বা দুপুরের পরে কোনও কাজই হয়তো করা যাবে না। উৎকল প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, গঞ্জাম, নয়াগড়, ছত্রপুর, ভুবনেশ্বরে দিনভর দারুণ বৃষ্টি পেয়েছে। গড় বৃষ্টিপাতে সব থেকে এগিয়ে গঞ্জাম জেলা (৪৭.৮ মিমি)। এর পরেই রয়েছে জগৎসিংহপুর, খুরদা, পুরী, ভদ্রক, নয়াগড়, কটকও। সর্বত্র প্রশাসনের সতর্ক বার্তার জেরে কম লোক রাস্তায় বেরিয়েছে।
গোটা ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই নিরাপদ জায়গায় ত্রাণ-শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। এ দিন সন্ধ্যা থেকেই তাঁরা কেউ কেউ ফিরতে শুরু করেছেন। পুরীর হোটেলগুলিতে এ দিন কম-বেশি শতকরা ৪০-৫০ ভাগ পর্যটক রয়েছেন। তবে পুরীর কয়েকটি হোটেলের মালিকের তথা মন্দির শহরের প্রবীণ বাসিন্দা শঙ্করনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “যা খবর পেয়েছি সোমবারই অনেক বোর্ডার হোটেলে আসছেন বলে জানিয়েছেন। ট্রেনও চালু হচ্ছে। ফলে সব কিছু ফের স্বাভাবিক হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।”