গত বছরও শুধুমাত্র সেবায়েতরাই অংশগ্রহণ করেছিলেন। ছবি পিটিআই।
অতিমারিতে শুধু সেবায়েতদের টানে রথের চাকা গড়ালেও রেলের চাকা পুরীর আগেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং হবে বলে জানালেন রেলকর্তারা। বাসের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা।
জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ১২ জুলাই। ২৪ জুলাই পর্যন্ত নানান আচার-অনুষ্ঠান সেরে শ্রীবিগ্রহের রত্নসিংহাসনের প্রত্যাবর্তন। কোভিড সংক্রমণ এড়াতে এই পর্বে পুরীমুখী দূরপাল্লার সব এক্সপ্রেস ট্রেনকে আগেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরো জুলাই জুড়ে এটাই চলবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন থেকে আসা পুরীমুখী ২৬ জোড়া ট্রেনকে খুরদা রোড স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হবে বলে রেল সূত্রের খবর। সেখান থেকেই ফিরতি পথে যেতে হবে।
হাওড়া-পুরী স্পেশালও এই নিষেধের তালিকায় রয়েছে। খুরদা রোড থেকে পুরীর মধ্যে কার্যত কোনও যাত্রিবাহী ট্রেনও চালাতে চান না পূর্ব উপকূল রেল কর্তৃপক্ষ। এমনিতেই উৎসবের দিনগুলিতে কার্ফু জারি করে শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক সেবায়েত মিলে পুরীর জগন্নাথের রথ টানবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎকল প্রশাসন। গত বছরেও এটাই হয়েছিল। তবে এ বার রথের মাস জুড়েই পুরীতে ট্রেনে-বাসে সতর্কতা। বৃহস্পতিবারেও পুরী নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। শ্রীমন্দিরের সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি বলছেন, “গত বার কিন্তু রথের সময় পুরীতে কোভিড তেমন হয়নি। এ বার সাবধান হতেই হবে!” কটক বা খুরদা জেলা (ভুবনেশ্বর যার অন্তর্গত)-র পরে পুরীতেই এখন কোভিড একটু বেশি। জেলায় কমবেশি ১৮০ থেকে ২৫০ জন সংক্রমিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরী-সহ উপকূলের জেলাগুলিতে লকডাউন চালাচ্ছে নবীন পট্টনায়কের প্রশাসন।
এপ্রিলেই বাংলা থেকে ওড়িশামুখী যাত্রীদের জন্য ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় বা সফরের ৪৮ ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছিল উৎকল সরকার। পরে আরও কড়াকড়ি করে ১৪ দিন কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসের নিয়ম বলবৎ করা হয়। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ওই বিধিনিষেধ ছিল। কার্যত একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই যাতে না-যান, তা নিশ্চিত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
সম্প্রতি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় সারা দেশ থেকেই পুরীতে যাত্রী বাড়ছিল। কিন্তু রথের আগে ঝুঁকি নিতে চায় না ওড়িশা সরকার। পরিস্থিতি যা, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া এখন পুরী থেকে ভুবনেশ্বর যাওয়াও মুশকিল। তবে রথযাত্রা সুষ্ঠু ভাবে সারতে ওড়িশাবাসীরা এটুকু কষ্টস্বীকারে পিছপা নন।
কিন্তু গরিব মানুষের ভুবনেশ্বর যাওয়ার দরকার হলে কী হবে?
স্বর্গদ্বারের হোটেল-কর্তা, আজন্ম পুরীবাসী শঙ্করনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ক’টা দিনের তো কষ্ট! জগন্নাথের কৃপায় আখেরে এতে ভালই হবে মনে হয়।”