Cyclone Dana

নেই আতঙ্ক, সতর্ক পদক্ষেপে তৈরি পুরী

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নিজে বার বার এক্স হ্যান্ডলে আশ্বাস দিচ্ছেন, শূন্য প্রাণহানি ও ১০০ শতাংশ নিরাপদ জীবনরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২০
Share:

শুনশান পুরীর সমুদ্রসৈকত। —ফাইল ছবি।

বুধবার বিকেল ৩টের পুরীকে দেখেও বোঝার জো ছিল না, কোনও সতর্কতার বার্তা রয়েছে। তখনও চুটিয়ে সমুদ্রস্নানে মেতে পর্যটকের দল। উট সফরের আয়োজন, ছবিওয়ালা, নুলিয়াদের জমজমাট পসার। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই ঝোড়ো হাওয়ায় বিপদের আশঙ্কায় স্বর্গদ্বারের রাস্তার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। হোটেল মালিকদের কাছে আসা নির্দেশিকায় আজ, বৃহস্পতিবার পর্যটকদের ঘরে থাকার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা পেয়ে বুধবার সকালেই তড়িঘড়ি গাড়ি ভাড়া করে সপরিবার কলকাতামুখী হন মানিকতলার বিজিতকুমার সাউ। শুক্রবার পুরী থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁর। সেই ট্রেন বাতিল হয়েছে। বিজিত দুপুরে বালেশ্বর থেকে বললেন, “তিন-চার হাজার বেশি খরচ হলেও ঝুঁকি নিতে চাইনি।” সল্টলেকের স্বপ্ননীল বসুও স্ত্রী ও দুই মেয়ে-সহ এ-দিন রাতেই কলকাতার ট্রেনে বসতে পেরেছেন। বৃহস্পতিবারের ট্রেন বাতিল হওয়ার পরে বহু কষ্টে জোগাড় করা ট্রেনের টিকিট। বোলপুরের রঞ্জিত মজুমদার আবার সপরিবার থেকেই যাবেন ঠিক করেছেন পুরীতে। শুক্রবার ফেরার ট্রেন বাতিল হয়েছে তাঁদের। রঞ্জিত বললেন, “ঝুঁকি নেব না! দুই ছেলেকে নিয়ে আমরা ঘরের ভিতরেই কাটিয়ে দেব। ভরসা জগন্নাথ!”

ওড়িশার বিভিন্ন মন্ত্রীকে রাজ্যের এক-একটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ জেলার দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মোহন তরণ মাঝি এ দিন ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি নিয়ে লম্বা বৈঠক করেন। উপমুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পারিদা পুরী জেলার দায়িত্বে। তবে সরকারি নির্দেশে পর্যটকদের যত দূর সম্ভব নিরাপদে ঘরের ভিতরে থাকতে বলা হলেও জগন্নাথ মন্দিরে দর্শনে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি সরকার। তবে দর্শনার্থীদের বৃষ্টি দেখলে সতর্ক করা হয়েছে। তা ছাড়া এখন কার্তিক মাস চলছে। কার্তিক ব্রত উদ্‌যাপনে বৃদ্ধাদের বেশি ভিড়। এক মাস ধরে নির্দিষ্ট শিবিরে থেকে তাঁরা শ্রী মন্দিরে ব্রত রক্ষায় আসছেন। ওই বৃদ্ধাদের বৃহস্পতি, শুক্রবার মন্দির দর্শনে বিরত থাকতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।

Advertisement

নিউ সি হক, পুলিন পুরী হোটেলের কর্ণধার শঙ্করনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “বৃদ্ধ এক দম্পতির মতো কেউ কেউ আমাদের হোটেলেও থেকে গিয়েছেন। ৩০-৫০% আবাসিক অন্যত্র যেতে পারেননি। আমরা দায়িত্ব নিয়েই তাঁদের যত্নে রেখেছি।” ভিক্টোরিয়া হোটেলের কর্ণধার দেবাশিস কুমার বলেন, “এখন হয়তো রাতগুলো আমাদের বিনিদ্র কাটবে। কিন্তু অল্প যে ক’জন পর্যটক হোটেলে থেকে গিয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তা, যত্নে কোনও আপস করা হচ্ছে না।”

তবে ঘূর্ণিঝড়ের ছায়ায় আজ সকাল থেকেই কার্যত বন্‌ধের চেহারা নিতে চলেছে ওড়িশা। বালেশ্বর, জাজপুর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপড়া, জগৎসিংহপুর, পুরী, ময়ূরভঞ্জ, কটক, কেওনঝড়, অঙ্গুল, ঢেঙ্কানল, খোরদা, গঞ্জাম, নয়াগড়ে স্কুল-কলেজ, কোর্টকাছারি বন্ধ। সুন্দরগড়, দেওগড়, সম্বলপুর, ঝাড়সুগুদা, সোনপুরেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নিজে বার বার এক্স হ্যান্ডলে আশ্বাস দিচ্ছেন, শূন্য প্রাণহানি ও ১০০ শতাংশ নিরাপদ জীবনরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি স্পেশাল রিলিফ কমিশনারের কন্ট্রোলরুম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রাপড়ার ভিতরকণিকা এবং ভদ্রকের ধামরা বন্দরের মাঝেই ‘ডেনা’-র মাটি ছোঁবার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত প্রবল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement