(বাঁ দিকে) বিষ্ণুপ্রসাদ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী। ওয়েনাড়ে ধস (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ঠিক করেছিলেন বিয়ের প্রথম বছরে জন্মদিনটা একটু অন্য রকম ভাবেই পালন করবেন। বাড়িতে নয়, অন্য কোথাও গিয়ে সেই জন্মদিন পালন করার বিষয়টিও পাকা হয়ে যায়। নিজের জন্মদিন পালনের জায়গা হিসাবে কেরলের পাহাড়ি এলাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন ওড়িশার চিকিৎসক বিষ্ণুপ্রসাদ চিনহারা। আর দেরি না করে স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী পালকে সঙ্গে রওনা দেন কেরলেন উদ্দেশে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুই চিকিৎসক সুক়ৃতি মহাপাত্র এবং স্বাধীন পণ্ডা।
বিষ্ণুপ্রসাদেরা প্রথমে বেঙ্গালুরু যান। সেখান থেকে ২৬ জুলাই তাঁরা কেরলে নামেন। সেখান থেকে চার জন মিলে যান ওয়েনাড়ে। ২৭ জুলাই অর্থাৎ মঙ্গলবার জন্মদিন ছিল বিষ্ণুপ্রসাদের। ঘটনাচক্রে, ছুটি কাটানোর জায়গা হিসাবে চুরালমালাকেই বেছেছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ-প্রিয়দর্শিনীরা। পাহাড়ের কোলে চুরালমালা গ্রামে একটি বাড়িতে উঠেছিলেন তাঁরা। সোমবার গভীর রাতে নেমে এল বিপর্যয়।
চুরালমালার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপরে সোমবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। সেই বৃষ্টির জল হড়পা বানের রূপ নিয়ে নেমে এসেছিল চুরালমালায়। গভীর রাত হওয়ায় গোটা গ্রাম তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। সেই হড়পা বানের সঙ্গে পাহাড়ের উপরিভাগ থেকে বড় বড় পাথর, কাদা আছড়ে পড়ে চুরালমালায়। ঘুমের মধ্যেই গোটা গ্রাম ধসের নীচে চাপা পড়ে যায়। যে বাড়িতে বিষ্ণুপ্রসাদেরা ছিলেন, হড়পা বানের ধাক্কায় ধসে যায়। লন্ডভন্ড হয়ে যায় মুহূর্তেই। তার পর থেকেই কারও আর খোঁজ মেলেনি। ধসের কয়েক ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার বিষ্ণুপ্রসাদের স্ত্রী প্রিয়দর্শিনীকে উদ্ধারকারীরা খুঁজে পেলেও বিষ্ণুপ্রসাদ এবং তাঁর দুই সঙ্গী চিকিৎসকের কোনও খোঁজ মেলেনি।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার চুরলমালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাদা আর পাথরের স্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার হয় বিষ্ণুপ্রসাদের দেহ। ওই দিনই জীবিত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে চিকিৎসক সুকৃতিকে। কিন্তু তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে আর এক চিকিৎসক স্বাধীন পণ্ডার এখনও কোনও হদিস মেলেনি। বিষ্ণুপ্রসাদের বোন এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “২৭ জুলাই দাদার জন্মদিন ছিল। তার আগের দিন রাত সাড়ে ১০টাতেও কথা হয়েছে দাদা-বৌদির সঙ্গে। ওরা একটা হোমস্টেতে উঠেছিল।”