Naveen Patnaik

উৎসাহ-ভাতার ছকে কোভিড-লড়াই ওড়িশায়

সরকারি সূত্রের খবর, এর বাইরেও শ্রমিকদের কোভিড-মোকাবিলার অ-আ-ক-খ বা পারস্পরিক দূরত্বের নিয়ম শিখিয়ে শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৫:১১
Share:

ছবি পিটিআই।

ভিন‌‌্‌ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের জন্য মাথাপিছু ২০০০ টাকা ঘোষণা করেছিল ওড়িশা সরকার। তবে ১৪ দিন অস্থায়ী মেডিক্যাল সেন্টারে (টিএমসি) কোয়রান্টিন ও ৭ দিন বাড়ি-বন্দি থাকলেই তা মিলবে। পঞ্চায়েতের ওয়ার্ড সদস্যের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে টাকা পাওয়া যাবে।

Advertisement

রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সুরেশ মহাপাত্র বলেন, “ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফেরা ন’লক্ষ শ্রমিককে চিহ্নিত করা গিয়েছে। প্রায় পাঁচ লক্ষকে টাকা দেওয়া হয়েও গিয়েছে। তবে যারা শৃঙ্খলায় হেলাফেলা করেছেন, তাঁরা কিছু পাবেন না।” উৎসাহ-ভাতার এই কৌশল কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে সফল বলে দাবি করছে নবীন পট্টনায়কের প্রশাসন। শুধু ট্রেনে ফেরা শ্রমিকরাই নন, বিমানে যাঁরা রাজ্যে ফিরেছেন, কোয়ারান্টিন সেন্টারে গিয়ে নাম নথিভুক্তিকরণের ভিত্তিতে মেয়াদ শেষে তাঁদেরও প্রাপ্য ১৫ হাজার টাকা। কোভিড চিকিৎসায় জড়িত ডাক্তারদের জন্য দিন পিছু ১০০০ টাকা, প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের জন্য ৫০০ টাকাও ধার্য করা হয়েছে। তা ছাড়া, টিএমসি (কোয়রান্টিন কেন্দ্র)-তে থাকার সময়ে ঘর রং করা, মেরামতি, বাগান বা চাষবাসের কাজে লাগানো হয়েছে শ্রমিকদের। তার জন্যও রোজ ৫০ টাকা দেওয়া হয়।

সরকারি সূত্রের খবর, এর বাইরেও শ্রমিকদের কোভিড-মোকাবিলার অ-আ-ক-খ বা পারস্পরিক দূরত্বের নিয়ম শিখিয়ে শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছিল। সুরেশ মহাপাত্রের কথায়, “কোয়রান্টিন পর্বেই শ্রমিকদের কোভিড-যোদ্ধা করে তুলতে চেয়েছি।" গবেষণাধর্মী কাজের সংস্থা রিজিওনাল সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট কোঅপারেশনের রিপোর্টও বলছে, কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলির আবাসিকদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ খাবার, দু'শতাংশ পানীয় জল, ছ'শতাংশ পরিচ্ছন্নতা বন্দোবস্তকে খারাপ বলেছে। মহিলা, পুরুষদের আলাদা শৌচাগার, বিদ্যুৎ-সহ মোট ৮ লক্ষ শয্যার পরিকাঠামো তৈরি করে ওড়িশা। সংস্থাটির তরফে রিপোর্ট নথিভুক্তিকরণের সঙ্গে যুক্ত ভুবনেশ্বরের প্রবীণ সমাজকর্মী জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কিছু বিক্ষিপ্ত খামতি থাকলেও কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলি সামগ্রিক ভাবে ভাল। ৮টি জেলার ৫৬টি কেন্দ্রে ঘুরে এটা মালুম হয়েছে।” তবে দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-যুদ্ধে কোনও রাজ্যকে সফল বলে দেওয়াও ঝুঁকির। প্রবাসীদের ফেরার সূত্রে কেরলে নতুন করে সংক্রমণ শুরুতে তা স্পষ্ট। পরীক্ষা বাড়ানোর পরে কর্নাটকেও সংক্রমণ বেড়েছে।

Advertisement

এই পটভূমিতে ওড়িশার ছবিটা কী রকম? জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেই চারটি জেলায় সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। তাই গঞ্জাম, খুরদা (ভুবনেশ্বর), কটক, জাজপুর এবং রৌরকেলা শহরে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কড়া লকডাউন চলবে। পুরীতে জগন্নাথ মন্দির বন্ধ। পুরীর কোভিড-পরিস্থিতিও কার্যত নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের দাবি, “ওড়িশায় এক দিনই হাজারের বেশি নতুন কেস ধরা পড়েছে। এর মধ্যে গঞ্জামে ৩০০, খুরদায় ১২০-৩০টি করে।”

তবে গুজরাত ফেরত পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমেই রোগ ছড়িয়েছে গঞ্জামে। গঞ্জামের রোগীদের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে আবার কটকে কোভিড ছড়িয়েছে। গঞ্জামে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। ভুবনেশ্বরেও বাইরে থেকে ফেরা সকলের হদিস রাখতে আংশিক ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছেন সুরেশ। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডের রোগীদের ভুবনেশ্বর-কটকের হাসপাতালে সামলানোর কথাও বলছেন তিনি। তবে উৎকল-কর্তারা আশাবাদী, এ বার সর্বশক্তি দিয়ে গঞ্জামে ঝাঁপালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। সুরেশ বলছেন, “৯০ শতাংশ টিএমসিতেই শ্রমিকদের কোয়রান্টিন-পর্ব শেষ। সেখানকার আসবাব কাজে লাগিয়ে গঞ্জামে ৩০০০ কোভিড কেয়ার সেন্টারে মাইক্রোম্যানেজমেন্ট চলবে।”

চারটি স্তরে উপসর্গহীন রোগী বা রোগীদের সংস্রবে আসা লোক জন, সামান্য উপসর্গবিশিষ্ট রোগী, পূর্ণ উপসর্গ যুক্ত রোগী এবং গুরুতর অসুস্থদের জন্য চারটি আলাদা জায়গায় চিকিৎসার পরিকল্পনা ওড়িশার। গত দু’দশকে বার বার ঘূর্ণিঝড় বা খরার মোকাবিলার অভিজ্ঞতাই আগাম প্রস্তুতির অভ্যাসকে রাজ্যের সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলেছে বলে আত্মবিশ্বাসী সরকারি কর্তারা।

কিন্তু এখনও ওড়িশায় পরীক্ষায় হার জাতীয় গড়ের নীচে। সুরেশের কথায়, “সাড়ে চার কোটি লোকের মধ্যে রাজ্যে ৯০০০ টেস্ট হচ্ছে। তা শিগগির বেড়ে ১০ হাজার হবে।” তা হলে কি মহারাষ্ট্র, তামিলনাডুর মতো সংক্রমণের হারও বাড়তে পারে? উৎকল-কর্তাদের দাবি, সংক্রমণের সম্ভাবনা নির্মূল করতে ধারাবাহিক ভাবে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তাই পরীক্ষা বাড়ালেও বিপর্যয় নামার কথা নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement