শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ছবি: সংগৃহীত।
বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ২৮৮ প্রাণ। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮০০-র বেশি মানুষ। তবু যাঁরা এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়েও বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে এটি অলৌকিক ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়। হাসপাতালের শয্যায় বসে বসে যেন সেই অলৌকিক গল্প শোনাচ্ছিলেন দীপক দাস।
দীপক অসমের বাসিন্দা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছিলেন তিনি। বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। দীপক জানান, তিনি যে বেঁচে যাবেন, এমন আশা করেননি। চোখের সামনে ট্রেনের কামরা উল্টে যেতে দেখেছেন। তাঁর মতে, একটিই কারণে তিনি বেঁচে গিয়েছেন।
কী কারণ?
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অসমের দীপক দাস। ছবি: সংগৃহীত।
দীপক জানান, তিনি ট্রেনে জানলার ধারের আসনে বসেছিলেন। যখন দুর্ঘটনা হয়, প্রথমে ট্রেনটি থরথর করে কেঁপে ওঠে। সেই সময়েই জানলাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। তার পর গোটা কামরা উল্টে গেলেও জানলাটি তিনি ছাড়েননি। এই জানলার ধারের আসনই তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্বাস দীপকের।
এনডিটিভিকে দীপক জানিয়েছেন, মালগাড়িতে ধাক্কা খেয়ে কী ভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের একের পর এক কামরা গড়িয়ে যেতে থাকে, নিজের চোখে তা তিনি দেখেছেন। বেঁচে আছেন বলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন দীপক।
ওই ট্রেনে থাকা আর এক যুবক এনডিটিভিকে জানান, তিনি বিহারের বাসিন্দা। দুর্ঘটনার সময় ঠিক কী ঘটেছিল, ভাল করে মনেই করতে পারেননি তিনি। তাঁর কেবল মনে আছে তীব্র এক ঝাঁকুনি এবং কানফাটানো শব্দের কথা। তার পরে হয়তো তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। যুবক জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালে এসে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। সেই অপেক্ষাতেই আছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয় এই ট্রেন। করমণ্ডলের একাধিক কামরা ছিটকে গড়িয়ে যায় পাশের লাইনে। সেই লাইনে ওই সময় ছুটে আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগিতে ধাক্কা খেয়ে সেই ট্রেনেরও দু’টি কামরা বেলাইন হয়।
দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। মূলত সিগন্যালের ত্রুটির কারণেই এমন দুর্ঘটনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বালেশ্বরে দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।