ইউটিউব থেকে নেওয়া ছবি।
সারা বছরে যা ঘটেনি, তাই ঘটল অগস্টের শেষ রবিবার। ইউটিউবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এর ভিডিয়োয় ‘লাইক’-কে ছাড়িয়ে গেল ‘ডিসলাইক’। রবিবার দুপুরে ভিডিয়ো পোস্ট হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এই ‘অপছন্দে’র স্রোত, যা তার পরেও বয়ে চলেছে।
রবিবার দুপুরে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদী, পিএমও ইন্ডিয়া, পিআইবি— এই চারটি ইউটিউব চ্যানেলেই আপলোড করা হয় বক্তৃতা। সবক’টি চ্যানেলেই দেখা যায় একই প্রবণতা। অপছন্দের রেশ গিয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর আগের ‘মন কি বাত’-এর ভিডিয়োগুলিতেও। সেগুলিতেও বাড়ে ‘ডিসলাইক’।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত জানুয়ারি থেকে জুলাই, সব ক’টি মাসের বক্তৃতায় লাইক বেশি থাকলেও মঙ্গলবার দেখা যায় জুলাইয়ের বক্তৃতার ভিডিয়োতেও ‘ডিসলাইক’ ছাপিয়ে গিয়েছে ‘লাইক’কে।
আরও পড়ুন: ফেসবুকের নিয়মেও বিতর্ক, রাহুলের অভিযোগ, চিঠি রবিশঙ্করেরও
সমাজমাধ্যমকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে বিজেপির দাপটও চোখে পড়ার মতো। তা সত্ত্বেও টানা দু’দিন ধরে এই ‘অপছন্দ’ জানানো সরকারের পরীক্ষা-নীতির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা বলেই মনে করছেন অনেকে।
তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান টুইটারে এই সংক্রান্ত খবর শেয়ার করে একে পড়ুয়াদের অনাস্থা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। আনন্দবাজারকে নুসরত বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই অতিমারিতে যে ভাবে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হল, তার বিরোধিতাই এই ডিসলাইক।’’
তবে শুধু এমন একটি ঘটনা দিয়েই ছাত্র-যুব সমাজের সামগ্রিক মত বিচার করা যাবে না বলেই মনে করেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্ররা হয়তো আশা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বলবেন। সেই আশা পূরণ না হওয়ায় তাঁরা তাঁদের মত জানিয়েছেন। তবে এই একটা ঘটনা দেশের ছাত্রসমাজের সামগ্রিক অসন্তোষের প্রকাশ বলে মনে করি না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘অর্থনীতির যা বেহাল অবস্থা, আর কর্মহীনতা যেভাবে বাড়ছে তা ছাত্র, যুবসমাজকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড় করিয়েছে। কাজেই এ রকম টুকরো টুকরো অসন্তোষ যে জমা হতে হতে দাবানলের মতন ফেটে পড়বে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।"
আরও পড়ুন: লাদাখে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চিনের, বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী
বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য অবশ্য টুইট করে দাবি করেন, ‘‘ইউটিউবের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে ওই ডিসলাইকের মাত্র ২ শতাংশ ভারত থেকে করা হয়েছে।’’ বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসের উদ্যোগেই নিট-জেইই আয়োজনের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়েছে।
বিজেপির দাবি মানতে নারাজ ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞ প্রতীক সিনহা। তিনি বলছেন, ‘‘অমিত মালব্য যখন বলছেন ৯৮ শতাংশ ডিসলাইক ভারতের বাইরে থেকে করানো হয়েছে, তা হলে সেই সম্পর্কিত বিশদ তথ্যও তাঁদের দেওয়া উচিত।’’
কোথা থেকে লাইক-ডিসলাইক করা হচ্ছে, ইউটিউব অ্যানালিটিক্স থেকে সেই তথ্য পাওয়া সম্ভব। সে কথা জানিয়েই প্রতীকের প্রশ্ন, ‘‘তথ্য না-দিয়ে এমন দাবি কী করে করা যায়?’’