নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।
উনিশে এপ্রিল।
এ বছরের লোকসভা ভোটের মরসুম। এক টেলিভিশন চ্যানেল সাক্ষাৎকারে সদর্পে বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: ‘‘ভারতের সব মানুষের জন্য ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’ (এনআরসি) হবে।’’
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অমিত শাহ গোটা দেশে এনআরসি চালু করার কথা বলছেন, অথচ কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের মত, এতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হবে। বেশ রেগেমেগেই প্রধানমন্ত্রী জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘দুনিয়ায় এমন কোনও দেশ আছে, যেটি ধর্মশালা? যার কাছে নাগরিকদের রেজিস্টার নেই? প্রশ্ন তাদের করা উচিত, যারা ৭০ বছরে নাগরিকদের রেজিস্টার তৈরি করেনি। তারা পাপী, দোষী। ভারতের সব মানুষের জন্য (রেজিস্টার) তৈরি হচ্ছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন কোথা থেকে এল?’’
প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকারের অংশ আজ সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতারা বলছেন, ‘‘যাঁরা ভাবছেন গত কাল রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শুধু তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য খণ্ডন করেছেন, ভুল। যদি ভাবেন, দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যেরও উল্টো পথে হেঁটেছেন, তা-ও ভুল। নরেন্দ্র মোদী নিজে নিজেকেই মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছেন। যাঁরা আকছার মিথ্যা বলেন, তাঁদের এমন সমস্যা হয়। ভুলে যান, নিজে কখন কী বলেছেন!’’ প্রসঙ্গত, গত কাল প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও কথা হয়নি। বিরোধীরা মিথ্যা বলছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রী, ডিটেনশন ক্যাম্প নেই? ছেলেটা তবে মরল কোথায়?’
‘চল্-ঝুটা’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে গত কাল থেকেই তোলপাড় নেট দুনিয়া। এত দিন ধরে সংসদের ভিতরে ও বাইরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার বার বলে এসেছেন, প্রথমে নাগরিকত্ব বিল, পরে এনআরসি। সেই অমিত শাহকে এখন ‘আপাতত চুপ’ রেখে কেন এনআরসি-র অবস্থান থেকে পিছু হটছেন প্রধানমন্ত্রী? কেন বলছেন, ২০১৪ সালে তিনি ক্ষমতায় আসার পর সরকারে, মন্ত্রিসভায় এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। শুধু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অসমে তা করতে হয়েছে! যদিও মোদী কিন্তু এক বারের জন্যও বলেননি, এনআরসি কখনওই হবে না।
সব মিলিয়ে এই বিভ্রান্তি তথা এনআরসি নিয়ে পুরনো সব মন্তব্য অস্বীকার কেন?
এই নিয়ে প্রশ্ন করতেই আজ দিল্লিতে বিজেপির মুখপাত্রেরা হাতজোড় করছেন। ঝাড়খণ্ডের ফল নিয়ে সকাল থেকেই মুখ গোমড়া তাঁদের। সংবাদমাধ্যমের সামনে কী বলবেন, খেই পাচ্ছেন না। তার উপর নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে মোদীর পিছু হটা নিয়ে প্রশ্ন করলেই বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলে দেওয়ার পর আমাদের কি বলা সাজে?’’ নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সওয়াল করা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের মত ফোনে চাওয়া হয়। দুপুরে তিনি ‘ব্যস্ত’ ছিলেন। রাতে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: পুরো দেশ আপনাকে আপনার পোশাকে চেনে, মোদীকে কটাক্ষ রাহুলের
তবে দেশের নানা প্রান্তে এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিজেপির কিছু নেতা। যেমন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। তাঁর মত, ‘‘গোটা দেশেই এনআরসি হবে। কিন্তু আলোচনার পরেই।’’ অমিত শাহের টিমের সদস্য পি মুরলীধর রাও-ও বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো বলেননি, এনআরসি শুরু হবে না। তিনি শুধু বলেছেন, এনআরসি শুরু হয়নি। এই নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করা আছে বিজেপির ইস্তাহারে।’’ তাঁরও মতে, আলোচনা করেই এনআরসি হবে। বরং অসমে তা করার সময় কংগ্রেস আলোচনা করেনি।
একই কথা ঘরোয়া মহলে বলছেন বিজেপির অন্য নেতারা। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘দেশজুড়ে আগুন জ্বলছে। তাতে জল ঢালতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বলেননি, এনআরসি একেবারেই হবে না। এখনও এই নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেটিই বলেছেন মাত্র।’’
প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তায় হঠাৎই ‘সন্তুষ্ট’ হয়ে পড়েছে শিবসেনা। দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে দেশ সন্তুষ্ট। তবে এটি সংসদে বললে ভাল হত।’’ কিন্তু মহারাষ্ট্রে সেনারই শরিক দলের নেতা শরদ পওয়ার রাজ্যসভায় অমিত শাহের মুখে শুনেছেন গোটা দেশে এনআরসি চালুর কথা। তাঁরও সংশয়, সরকারে কিংবা মন্ত্রিসভায় কোনও আলোচনা ছাড়া শাহ এ ভাবে সংসদে বলতে পারেন?