এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর উদ্বেগ ও আশঙ্কা। ছবি: পিটিআই।
নির্ধারিত সময়েই প্রকাশিত হল অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা। নতুন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লক্ষ মানুষ। বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ। এনআরসি দফতর সূত্রে এমনটাই জানানো হয়েছে। খসড়া তালিকায় এই সংখ্যাটা ছিল ৪১ লক্ষ।
সময় যত এগিয়েছে অসমজুড়ে নেমে এসেছে আশঙ্কা আর উদ্বেগের ছায়া। একটা প্রশ্নই ঘুরে বেড়াতে থাকে, চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকবে তো? শনিবার সকাল ১০টায় অসমের নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়। তাতে দেখা যায়, ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। http://www.nrcassam.nic.in এই ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে নিজেদের নামের তালিকা দেখতে পাবেন নাগরিকরা। যাঁদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই তাঁরা সরকার পরিচালিত এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের স্টেটাস দেখতে পারবেন বলে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
অনেকেই এনআরসি-র পদ্ধতি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীও। তাঁদের আশঙ্কা, বহু বাঙালি হিন্দুর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। অনেক বিদেশি এই তালিকায় ঢুকে পড়তে পারেন। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। তিনি পরে জানান, তালিকা থেকে বিদেশিদের বাদ দিতে কেন্দ্র আইন আনারও চিন্তাভাবনা করছে যাতে সঠিক নাগরিকরা তালিকা থেকে বাদ না পড়েন।
আরও পড়ুন: এনআরসি তালিকায় নাম খুঁজবেন কী ভাবে, নাম না থাকলে কী করতে পারেন
আরও পড়ুন: ‘অমর্যাদা’ নিয়ে থাকবেন না, গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক কৈলাসের সঙ্গে, ‘নিষ্কৃতি’ চাইলেন শোভন
অসমের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও এই এনআরসি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাতিল করার ক্ষেত্রে এই তালিকা কতটা সহযোগী হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা দক্ষিণ সালমারা ও ধুবুরিতে তালিকা থেকে বাদ পড়ার হার সর্বনিম্ন। অথচ ভূমিপুত্র জেলায় প্রচুর মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এটা কী ভাবে সম্ভব? আমরা এই তালিকায় ভরসা রাখছি না।”
তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই গোটা রাজ্যকে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ৬০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ২ হাজার আধাসেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। অসম পুলিশের তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, যে সব ব্যক্তিদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। পাশাপাশি তারা এই আহ্বানও জানিয়েছে, “গুজবে কান দেবেন না। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমাজে একটা বিভ্রান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিছু অসামাজিক শক্তি। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কায় থাকা নাগরিকদের অবশ্য আশ্বস্তই করছে সরকার। তালিকায় নাম না থাকলে কী করতে হবে সে প্রক্রিয়াও জানিয়েছে তারা। তালিকায় নাম না থাকা নাগরিকদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এই সময়সীমা আগে ছিল ৬০ দিন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে এটাও জানানো হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে মামলাটি হেরে যান, তিনি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারেন।