মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নবীকরণে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’-এর অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যখন সরব, তখন এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গে যাঁদের শিকড় রয়েছে, এমন লক্ষাধিক বাঙালির নাম পঞ্জিতে ওঠেনি স্রেফ মমতা-সরকারের গাফিলতিতেই।
পরিবারের যাঁর নাম প্রথম অসমের কোনও সরকারি নথিতে নথিভুক্ত হয়েছে, তা উল্লেখ করার পাশাপাশি গোটা পরিবারের বংশবৃক্ষেরও উল্লেখ আবেদন পত্রে করতে হয়। যাঁরা বাইরের রাজ্য থেকে এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘ভারতীয়’ হওয়ার বিভিন্ন প্রমাণের পাশাপাশি, সাবেক রাজ্যে থাকা জমির দলিল, ভোটার তালিকা বা সরকারি নথির প্রমাণ দিতে হয়।
এনআরসি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করেন কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা। এই আইএএস অফিসার এ দিন ‘আনন্দবাজার’কে জানান, ‘‘এমন দু’লক্ষ ৬৮ হাজার নথি যাচাই করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ ২৮টি রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বিশেষ সহযোগিতা মেলেনি।’’ অসমের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র কমিশনার হাজেলা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙালি পরিবারের লিগ্যাসি ডেটা, বংশবৃক্ষ, জমি বা চাকরির নথি যাচাই করতে সে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে পাঠানো এক লক্ষ ১১ হাজার নথির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ মাত্র পাঁচ হাজার নথি যাচাই করে ফেরত পাঠিয়েছে।’’
পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে বিহার। সেখানে পাঠানো ৬৬ হাজার নথির মধ্যে যাচাই হয়েছে মাত্র তিন হাজার। অথচ ত্রিপুরায় পাঠানো ৫১ হাজারের মধ্যে ৩৩ হাজার নথি ইতিমধ্যেই যাচাই হয়ে ফেরত এসেছে। রাজস্থানে পাঠানো ১৫ হাজারের মধ্যে ৮ হাজার নথি যাচাই হয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরকারি উদাসীনতা ও অনাগ্রহের ফলেই অনেক বাঙালি পরিবার বিপাকে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি বলেন, ‘‘চট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। নথি দেখেই যা বলার বলতে পারব।’’