ফিকির এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।
নোট নাকচের কষ্ট এখন সইতে পারলে আখেরে ভাল হবে অর্থনীতির। লাভ হবে দীর্ঘ মেয়াদে। মোদী সরকারের বারবার আওড়ে যাওয়া এই আশ্বাস নিয়ে এ বার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সামনেই প্রশ্ন তুলল শিল্পমহল। তাদের আশঙ্কা, নোট বাতিলের ক্ষত দীর্ঘ মেয়াদেও অর্থনীতির উপর থেকে যাবে। কিংবদন্তি অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের শব্দ ‘ধার’ করে যে উদ্বেগের কথা মনমোহন সিংহ সম্প্রতি বলেছিলেন, কার্যত তা-ই যেন উঠে এল শিল্পমহলের মুখে।
শনিবার ফিকি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় নোট নাকচের পক্ষে সওয়াল করেন জেটলি। দাবি করেন, এখন সমস্যা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এতে ভাল হবে অর্থনীতির। কিন্তু সেই মঞ্চ থেকেই বণিকসভাটির বিদায়ী সভাপতি হর্ষ নেওটিয়া বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে এই ধাক্কা স্বল্পমেয়াদি। কিন্তু তা সামলাতে কর কমানো, সুদ কমানো এবং পরিকাঠামোয় দ্রুত লগ্নির দাওয়াই চাই।’’ নইলে স্বল্প মেয়াদের এই ধাক্কা লম্বা সময়েও অর্থনীতির বুকে গভীর ক্ষত রেখে যেতে পারে বলে শিল্পমহলের আশঙ্কা।
শিল্পের দাবি
• করের বোঝা কমুক
• নামুক সুদের হার
• পরিকাঠামোয় লগ্নি বাড়ুক দ্রুত
কিছু দিন আগেই রাজ্যসভায় নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকারকে চাঁচাছোলা আক্রমণ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বলেছিলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে কষ্টদায়ক কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পক্ষে ভাল। কেইনস কী বলেছিলেন, তা তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া ভাল— দীর্ঘ মেয়াদে আমরা সকলেই মৃত।’’ অর্থাৎ, ধাক্কা সামলে টিকে থাকলে তবে না তার সুফল কুড়োনোর প্রশ্ন।
এ দিন কার্যত একই আশঙ্কা শোনা গিয়েছে শিল্পমহলের মুখে। নোট বাতিলের জেরে প্রায় সমস্ত পণ্য-পরিষেবার চাহিদা গোত্তা খেয়েছে। সরকারের দাবি, বাজারে নগদের জোগান স্বাভাবিক হলে, পরিস্থিতি পাল্টাবে। ফিরবে চাহিদা। কিন্তু শিল্পমহলের আশঙ্কা, কেন্দ্র পদক্ষেপ না করলে, চাহিদার পালে হাওয়া অত সহজে ফিরবে না। তাই অর্থমন্ত্রীর কাছে কর ও সুদের হার কমানো এবং পরিকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগের দাওয়াই চেয়েছে তারা।
জেটলির আশ্বাস
• নগদ সঙ্কট মিটবে তাড়াতাড়ি
• আগের মতো অত নোট আর লাগবে না
• দীর্ঘ মেয়াদে লাভ অর্থনীতির
শিল্পমহলকে ঢালাও আশ্বাস দিয়েছেন জেটলিও। দাবি করেছেন, ৮ নভেম্বরের আগে যত নোট লাগত, ডিজিটাল লেনদেনের দৌলতে আগামী দিনে ততটা আর লাগবে না। তাই তুলে নেওয়া নগদের সমপরিমাণ টাকা (১৫.৪৪ লক্ষ কোটি) নোটে ফেরানোর প্রয়োজন নেই। যতটা প্রয়োজন, তার জোগান দিতে বেশি সময় লাগবে না। তাঁর কথায়, ‘‘জেনেশুনেই কম নগদ রাখার চেষ্টা করছি। যাতে সেই অভাব ডিজিটাল লেনদেনে পূরণ হয়।’’
নোট নাকচের জেরে জিএসটি নিয়ে যে ভাবে ফের টালবাহানা হচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ শিল্পমহল। এখনও রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য না হওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে তা চালুর সম্ভাবনা কার্যত মুছে গিয়েছে। জেটলির যুক্তি, জিএসটি আয়কর নয় যে ১ এপ্রিল (আর্থিক বছরের প্রথম দিন) থেকে তা বসাতে হবে। ওই কর চাপে বেচা-কেনায়। তাই অর্থবর্ষের যে কোনও সময় ওই কর চালু সম্ভব। যদিও সংবিধান সংশোধনী বিল অনুযায়ী, ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেটি করতে হবে।
জেটলি এ দিন বলেন, এই সাহসী সংস্কার রূপায়ণের জন্য চওড়া কাঁধ মোদী সরকারের রয়েছে। সেই কাঁধ খোদ নরেন্দ্র মোদীরই কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি তিনি।