প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
লোকসভা ভোটের আগের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করাতে চাইছে বলে বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ। কিন্তু তা আইনে পরিণত করতে গেলে জনজাতি সমাজগুলিতে বড়সড় বিরোধের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ(আরএসএস)-এর।
সঙ্ঘের জনজাতি সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ সূত্রের খবর, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে জনজাতি সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং লোকসভা নির্বাচনে পড়তে পারে। ২২তম আইন কমিশনে এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে চলেছে ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সঙ্ঘের এই মত সোমবার প্রতিফলিত হয়েছে সংসদীয় আইন মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত আলোচনায় জনজাতি সমাজকে ওই আইনের বাইরে রাখার প্রস্তাব দেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপির সাংসদ সুশীল মোদী। এর আগে বিজেপির সহযোগী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যের শাসকদল, নাগাল্যান্ডের এনডিপিপি, মেঘালয়ের এনপিপি এবং মিজোরামের এমএনএফ কড়া ভাষায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সমালোচনা করেছিল।
এর ফলে ভবিষ্যতে কার্যত অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড-এর সুরেই আইন কমিশনে সঙ্ঘকেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা করতে দেখা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন কেন্দ্র-নিযুক্ত ২২তম আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রায় ১০ লক্ষ ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতিক্রিয়া জমা পড়েছে বলে আইন কমিশন সূত্রের খবর।
গত মাসে আইন কমিশন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন প্রসঙ্গে জনগণের মতামত নেওয়া শুরু করতেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভার আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্যে কেন্দ্র ওই আইন আনতে চলেছে। এরই মধ্যে ২৭ জুন মধ্যপ্রদেশের ভোপালে দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বিষয়টি নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও পরিবারে যদি প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকে, তা হলে কি সেই সংসার চালানো যায়?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের এক একটি সম্প্রদায়ের জন্য যদি এক এক রকম আইন থাকে, তা হলে দেশ এগোতে পারে না।’’
আসন্ন বাদল অধিবেশনে সংসদে অভিন্ন দেওয়ানি বিল আসতে চলেছে বলে গত সপ্তাহে দাবি করেছেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এমনকি, তার দিনটিও ‘জানিয়ে’ দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার কপিল টুইট করে লেখেন, ‘‘৫ অগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহৃত হয়। ৫ অগস্ট রাম মন্দিরের শিলান্যাস হয়েছিল। আর আগামী ৫ অগস্ট অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আসতে চলেছে।’’ এই পরিস্থিতিতে এ বার শোনা গেল সঙ্ঘের অন্দরে ‘ভিন্নমত’।