Congress

Congress: কানহাইয়া নতুন নন, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে কংগ্রেসেই যোগ দেওয়ার ‘রীতি’ পুরনো

বাম রাজনীতির আঁতুড়ঘর জেএনইউ-র ছাত্রনেতা হিসেবে বিখ্যাত হওয়ার পর অনেকেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৮
Share:

কংগ্রেসে যোগ দিলেন কানহাইয়া কুমার। ছবি পিটিআই।

মনমোহন সিংহর জমানায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন সন্দীপ সিংহ। সিপিআই(এমএল)-এর ছাত্র সংগঠন আইসা-র নেতা। গলা ফাটিয়ে কংগ্রেসের উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতেন। সেই সন্দীপ এখন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার ‘টিম’-এর
প্রধান সদস্য।
সন্দীপ একা নন। তাঁর আগে-পরেও অনেকে বাম রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত জেএনইউ-র ছাত্রনেতা হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। আইসা বা সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তার পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সেই পথে হেঁটে এ বার কানহাইয়া কুমারও কংগ্রেসে যোগ দিলেও জেএনইউ-র ক্যাম্পাসের বাম ছাত্র নেতানেত্রীরা মনে করছেন, এটা মতাদর্শের সঙ্কট নয়। প্রচারের আলো বেশি পেয়ে যাওয়ায় কানহাইয়া নিজেকে তাঁর দল সিপিআইয়ের থেকেও বড় হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। নিজের বক্তৃতার জন্য বিখ্যাত কানহাইয়া আরও বড় মঞ্চ খুঁজছিলেন। সে কারণেই তাঁর কংগ্রেসে যোগ।
জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভানেত্রী হিসেবে সুচেতা দে-ও এক সময়ে ক্যাম্পাসে তাঁর জ্বালাময়ী বক্তৃতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। বর্তমানে সিপিআই(এমএল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুচেতা দে এখন দিল্লিতে বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত। সুচেতার প্রশ্ন, “গোটা লকডাউন পর্বে যখন খেটে খাওয়া মানুষ সমস্যায় পড়েছিলেন, তখন কানহাইয়া কুমার কোথায় ছিলেন? তাঁর কোনও ভূমিকা তো আমরা দেখতে পাইনি!” সুচেতার বক্তব্য, বামপন্থী বিশেষত কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির প্যাকেজে যেমন ভাল বক্তৃতা থাকে, তেমনই সংগঠনে কাজ করা, সঙ্কটের সময়ে মানুষের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়াও থাকে। কানহাইয়ার সেখানেই ঘাটতি ছিল। ঠিক একই রকম ঘাটতি কংগ্রেসের মধ্যেও রয়েছে।

Advertisement

নব্বইয়ের দশকে শাকিল আহমেদ খান, বাত্তিলাল বৈরওয়া, সৈয়দ নাসির হুসেনের মতো এসএফআই নেতারা জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে পরিচিত পেলেও পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। সন্দীপ সিংহের পরে মোদী জমানায় ছাত্র সংসদের সভাপতি মোহিত পাণ্ডেও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। কানহাইয়া সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ-এর প্রার্থী হিসেবে জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভাপতি হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে এসএফআই, আইসা-র মতো ছাত্র সংগঠন সমর্থন করেছিল।
জেএনইউ ক্যাম্পাস থেকে বঙ্গের বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী হওয়া দীপ্সিতা ধরের বক্তব্য, কানহাইয়ার জয় ব্যক্তি বিশেষের জয় ছিল না। সংগঠিত আন্দোলনের জয়কে নিজের কৃতিত্ব বলে ধরে নিলে বোঝার ভুল হয়ে যায়। জেএনইউ ‘এলিট’ প্রতিষ্ঠান বলে সেখানে কাজকর্মে অনেক প্রচারের আলো পড়ে। ফলে দলের থেকে নিজেকে বড় বলে মনে হয়। দলেরও দায়িত্ব থাকে সেই ভুল শুধরে দেওয়ার। দীপ্সিতা বলেন, “কানহাইয়াকে সিপিআই জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য করেছিল। সেটাও তাঁর যথেষ্ট বলে মনে হয়নি।”
সুচেতা-দীপ্সিতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জেএনইউ ক্যাম্পাসের বামপন্থী রাজনীতি থেকে উঠে আসা কানহাইয়া, সন্দীপ, মোহিত পাণ্ডেরা যেমন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, তেমনই সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, কবিতা কৃষ্ণনের মতো বাম দলের শীর্ষনেতারাও রয়েছেন। বিজু কৃষ্ণন, প্রসেনজিৎ বসুর মতো প্রাক্তন ছাত্র নেতারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের বক্তব্য, “ভাল বক্তৃতা দিলেও কানহাইয়া কিন্তু নিজের সংগঠনের জন্য গত কয়েক বছরে বিশেষ কাজ করেননি। জেএনইউ-র প্রাক্তন নেত্রী শেহলা রশিদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। কাশ্মীরে গিয়ে নিজের সংগঠন করতে চাইলেও শেহলা সফল নন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement