Nobel Laureates Joseph E. Stiglitz

স্বৈরাচারে দুর্ভোগ বেড়েছে ভারতের: নোবেলজয়ী

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০০
Share:

জোসেফ স্টিগলিৎজ়

কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা এবং হঠাৎ ডাকা লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য মোদী সরকারকে কড়া সমালোচনায় বিঁধলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ়। ভারতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই পাল্টাতে বললেন সরকারের ‘মুসলিম-বিরোধী অবস্থান’। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে কার্যত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারোর ‘স্বৈরাচারের’ সঙ্গে তুলনা করলেন তিনি।

Advertisement

আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেলজয়ী অধ্যাপক স্টিগলিৎজ় বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের জমানায় মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। আজীবন দরিদ্র মানুষের সমস্যা এবং বিশ্ব জুড়ে আর্থিক অসাম্যের কথা বলার কারণে দুনিয়া জুড়ে তাঁর পরিচিতি অর্থনীতির আলোচনার ‘বিবেক’ হিসেবেও। সোমবার বণিকসভা ফিকি এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের আয়োজিত ভিডিয়ো-আলোচনায় স্টিগলিৎজ় বললেন, “যে সমস্ত দেশ গণতন্ত্রের উৎকৃষ্ট মডেল, সকলের পরামর্শ শুনতে যাদের (সরকারের) কান খাড়া, তারাই মূলত বেশি ‘সফল’ করোনা মোকাবিলায়। যেমন নিউজ়িল্যান্ড, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া। আর আমেরিকা, ব্রাজিলের মতো যে সমস্ত দেশ স্বৈরাচারীদের হাতে, তাদের অবস্থা তথৈবচ।”

আর ভারত? সারা দুনিয়ায় এক ডাকে চেনা অর্থনীতিবিদের উত্তর, “কোভিড মোকাবিলায় ঠিক কী কী করা উচিত ছিল না, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ভারত। তড়িঘড়ি লকডাউন ঘোষণার আগে এ দেশের সরকার ভাবেইনি যে, তার কী মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের উপরে। তার জেরে ওই ঘরবন্দি দশার মধ্যেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গার দিকে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন অজস্র মানুষ। তার জেরে রোগ ছড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতিও। লকডাউন ওঠার পরে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির পরিসংখ্যানেই যা প্রমাণিত।”

Advertisement

স্টিগলিৎজ়ের মতে, সারা পৃথিবীতেই স্বৈরাচারী শাসকেরা কারও কথা কানে তোলা পছন্দ করেন না। বিশ্বাস করেন বিভাজনের রাজনীতিতে। আর সামান্যতম সুযোগেই দোষ চাপান দেশের ভিতরের বা বাইরের কোনও ‘শত্রুর’ কাঁধে। যেমন, ট্রাম্পের কথা শুনলে মনে হয়, আমেরিকার যাবতীয় সমস্যার শিকড় চিনে। আর ঠিক এই প্রসঙ্গেই মোদী সরকারের ‘মুসলিম-বিরোধী অবস্থানের’ প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। বলেছেন, “কোভিড থেকে প্রথম শিক্ষাই হল, পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। একান্ত প্রয়োজন সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা।…কিন্তু মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম বনাম হিন্দু বিভাজনের অভিযোগ ওঠে।…এই ভাবমূর্তি ভারতের অনেক প্রতিবেশী দেশ, এমনকি বিশ্বের বহু মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।…সামাজিক তো বটেই, এতে পাকাপাকি ক্ষতির সম্ভাবনা ভারতের অর্থনীতিরও।” প্রধানমন্ত্রীর যদিও দাবি, তাঁর সরকার ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর পাশাপাশি ‘সব কা বিশ্বাস’ অর্জনেও বিশ্বাসী।

করোনার ছোবলে কাবু ভারতীয় অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে তাঁর দাওয়াই কী হতো? এই প্রশ্নের উত্তরেও সবার আগে সকলকে নিয়ে চলার রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন স্টিগলিৎজ়। একই সঙ্গে যোগ করেছেন, “উচিত ছিল, অতিমারির শুরুতেই ধনকুবেরদের উপরে কর বসিয়ে সেই টাকা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের হাতে তুলে দেওয়া। যাতে তাঁরা বিপাকে না-পড়েন। আবার তাঁদের কেনাকাটার হাত ধরে চাকা ঘুরতে শুরু করে অর্থনীতির।”

দরিদ্রদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার কথা গোড়া থেকেই বলছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুরাও। কিন্তু তাঁদের কথাই বা মোদী সরকার কানে তুলেছে কোথায়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement