কাঠের তৈরি এ এক অদ্ভুত বাড়ি। যেখানে না আছে কংক্রিটের দেওয়াল, না আছে এসি। কিন্তু আধুনিক বাড়ির সমস্ত সুযোগ সুবিধায় রয়েছে সেখানে।
গোয়ার কোরাও দ্বীপের ছোট্ট গ্রাম ক্যারোনা। সেই গ্রামেই রয়েছে এই বাড়ি।
ইনি চট্টোপাধ্যায় নামের এক স্থপতি বানিয়েছেন এই বাড়ি। ২০০৯ থেকে এই বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি।
প্রকৃতি বান্ধব বাড়ি বানাতে চেয়েছিলেন ইনি। যে বাড়ি প্রকৃতির উপর বোঝা হয়ে থাকবে না। সেই চিন্তা থেকেই বানানো হয়েছে এই বাড়ি।
এই বাড়ি তৈরি করা হয়েছে নারকেল কাঠ দিয়ে। সেই কাঠকেই স্তরে স্তরে সাজিয়ে তৈরি হয়েছে গোটা বাড়ি। বাড়িতে নেই কংক্রিটের কোনও দেওয়াল।
২০০৪-এ গোয়া আসেন ইনি। তার পর সেখানে থাকা শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যে সেখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা হয়ে যায় ইনির। তার পর সেই মতো বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত।
৫৯ বছরের ইনি জানিয়েছেন, এই বাড়ি তৈরি করতে তাঁর সাড়ে চার বছর সময় লেগেছে। ফ্লুইডিটি অব স্পেসের তত্ত্ব মেনেই তৈরি হয়েছে এই বাড়ি। বাড়ি বানানোর জন্য কেন নারকেল কাঠকে বেছে নিলেন?
এ ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ গাছ বনভূমির অংশ। সেই কাঠ দিয়ে বাড়ি বানাতে গেলে প্রচুর গাছ কাটতে হত। কিন্তু নারকেল গাছ সে অর্থে বনভূমির অংশ নয়। অনেকে বাড়িতেও নারকেল গাছের চাষ করেন। এই গাছ সাধারণত ৫০-৮০ বছরের বেশি বাঁচেও না।
গোয়া ও তাঁর পাশ্ববর্তী এলাকায় নারকেল গাছ পাওয়া যায় প্রচুর। এই গাছ জন্মায় ও বেড়ে ওঠেও সহজে। তাই বাড়ির জন্য নারকেল গাছকেই বেছেছিলেন ইনি।
প্রথমে গাছের অংশ দিয়ে বানাতে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন আসবাব। তার পর বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
সব সময় নারকেল কাঠ সোজা পাওয়া সম্ভব হয় না। সেই সমস্যা মোকাবিলায় তিনি কাঠের আকার অনুসারে বাড়ির বিভিন্ন অংশের নকশা করেছেন।
যেমন কাঠের বড় অংশগুলি তিনি ব্যবহার করেছেন ছাদ তৈরির জন্য। ছোট ছোট অংশগুলি জয়েন্ট, বোল্ট, ক্রশ সেকশনের কাজে ব্যবহার করেছেন।
তাঁর দাবি, অন্যান্য কাঠ থেকে নারকেল কাঠ অনেক বেশি টেকসই। এমনকি সেগুন কাঠের থেকেও মজবুত ও শক্তিশালী নারকেলের গুঁড়ির কাঠ।
এই বাড়িতে সে অর্থে কোনও দেওয়াল নেই। সবই জানলার মতো ফাঁক ফাঁক। তবুও ইনি কারুকার্য করে এমন বানিয়েছেন, যাতে ঘরের ভিতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা গেলেও, বাইরে থেকে ভিতরের কিছু দেখা যায় না।
এই বাড়ির ছাদ একাধিক স্তরে বিভিক্ত। তা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা পেরিয়ে তাপ, বৃষ্টি প্রবেশ করতে পারে না। ইনির দাবি, এই বাড়িই এয়ার কন্ডিশনের কাজ করে। তাই ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য আলাদা করে এয়ার কন্ডিশনের প্রয়োজন পরে না এখানে।
শুধু তাই নয়, বাড়ির মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে বছরে প্রায় সাত লক্ষ লিটার জল ধরে রাখা যায়। সেই জলকে পরিশোধন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বাড়ির সুইমিং পুলেও ব্যবহৃত হয় সেই জল।