৩ হাসপাতালে অচলাবস্থা
Doctor

বেতন দিচ্ছে না পুরসভা, অনশনে চিকিৎসকেরা

এই অবস্থায় সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকে অনশন ধর্মঘটে বসলেন দিল্লির পাঁচ জন চিকিৎসক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডাক্তারদের করোনা-যোদ্ধা তকমা দিয়ে বিস্তর ঢাক পেটাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু খাস দিল্লিতেই বিজেপি পরিচালিত উত্তর দিল্লি পুরসভার অধীনে থাকা তিনটি হাসপাতালের ডাক্তাররা জুলাই থেকে বেতন পাচ্ছেন না। গত ২০ দিন ধর্মঘটে বসেও লাভ হয়নি। তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ডাক্তাররা বেতনের সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

এই অবস্থায় সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকে অনশন ধর্মঘটে বসলেন দিল্লির পাঁচ জন চিকিৎসক। হিন্দু রাও হাসপাতাল, রাজন বাবু টিবি হাসপাতাল, কস্তুরবা গাঁধী মহিলা হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী গত সপ্তাহ থেকেই ধর্মঘট করছেন। তিনটি হাসপাতালই বিজেপি পরিচালিত উত্তর দিল্লি পুরসভার অধীনে। এঁদের মধ্যে হিন্দু রাও হাসপাতালের ডাক্তাররা মাসের গোড়া থেকেই ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। বাকিরা গত সপ্তাহ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনের টনক না নড়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সিদ্ধার্থ তারা, মনীশ চৌধরি, তেজস চৌধরি, ময়ূর এবং নীলচক্র সাহু অনশন শুরু করেন। হাসপাতালের সামনেই ফুটপাথে অনশন করছেন তাঁরা। হিন্দু রাও হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তারদের সংগঠনের সভাপতি অভিমন্যু সারদানার মন্তব্য, “আমি গত কাল সারা রাত ওখানে ছিলাম। অনশনকারীদের মনের জোর ও সঙ্কল্পকে স্যালুট জানাচ্ছি। উত্তর দিল্লি পুরসভার জন্যই পরিস্থিতি এমন লজ্জাজনক হয়ে উঠেছে।”

কী বলছে বিজেপি পরিচালিত উত্তর দিল্লি পুরসভা? পুরসভার কর্তাদের বক্তব্য, তাঁদের কোষাগারে টাকা নেই। তাই ডাক্তারদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের কাছে তাঁদের প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকা পাওনা। সে টাকা মিলছে না বলে বেতনও দেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজারের বেশি করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বরের পরে এত বেশি সংক্রমণ আর ধরা পড়েনি। দিল্লিতে বায়ুদূষণ ছড়াতে শুরু করেছে। ফলে এমনিতেই স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। তার মধ্যে তিনটি হাসপাতালে ধর্মঘট চললে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা ভেবে আতঙ্কিত সকলেই।

Advertisement

এই তিনটি হাসপাতালের মধ্যে ৯০০ শয্যার হিন্দু রাও হাসপাতাল কোভিড রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘট শুরু করায় কেজরীবাল সরকার ধাপে ধাপে করোনা রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কোভিড হাসপাতালের তালিকা থেকেই হিন্দু রাও বাদ গিয়েছে। ডাক্তারদের যুক্তি, রাজঘাট থেকে যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ, কালো ব্যাজ পরে স্লোগান, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি, সবই হয়ে গিয়েছে। ধর্মঘট ছাড়া তাঁদের কোনও উপায় ছিল না। তার পরেও লাভ হচ্ছে না দেখে ‘বিনা বেতনের করোনা-যোদ্ধা’-দের অনশনে বসতে হয়েছে।

শনিবার অভিযোগ উঠেছে, বেতনের সমস্যার সমাধানের বদলে ডাক্তারদের উপরে চাপ তৈরি করতে বদলি করা হচ্ছে। শনিবার হিন্দু রাওয়ের ডাক্তাররা আবাসিক ডাক্তারদের সঙ্গে ধর্মঘটে যাওয়ায় চার জন প্রবীণ চিকিৎসককে বদলি করা হয়। ডাক্তারদের অভিযোগ, এমস-সহ অন্যান্য হাসপাতালের ডাক্তাররাও তাঁদের প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন। পুরসভা অবশ্য একে রুটিন বদলি বলে দাবি করেছে।

প্রোগ্রেসিভ মেডিকোস ও সায়েন্টিস্টস ফোরামের সভাপতি হরজিৎ সিংহ ভাটির মন্তব্য, ‘‘মোদী সরকার নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। বিহারে গিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আর তাঁর বাড়ির কাছে হাসপাতালের ডাক্তাররা বেতন না পেয়ে অনশনে বসেছেন। ডাক্তারদের প্রাণ, ভোট কিছুরই গুরুত্ব নেই! তাই এই অবস্থা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement