ছবি পিটিআই।
কৃষক আন্দোলনে যোগদানকারী কোনও কৃষককে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জিজ্ঞাসাবাদ করছে না বলে আজ সংসদে জানাল কেন্দ্র। রাজ্যসভায় সরকার আজ এ কথা জানালেও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য স্বীকার করা হয়েছে, যে সব সংগঠন বা ব্যক্তি ওই আন্দোলনের নামে দেশে ঝামেলা পাকানোর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়েছেন তাদের অর্থের উৎস অবশ্যই খুঁজে দেখছে এনআইএ।
প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় গত কাল গ্রেফতার হয়েছেন দীপ সিধু। পুলিশের দাবি, তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, দেশে অশান্তি ছড়ানোর জন্য বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাঠানো হচ্ছে। দিল্লি পুলিশ আজ ইকবাল সিংহ নামে লালকেল্লায় তাণ্ডবের আর এক চক্রান্তকারীকে গ্রেফতার করেছে। ইকবালকে ধরিয়ে দেওয়া জন্য
পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসে অশান্তি ছড়ানোর পিছনে অন্যতম চক্রী যে ইকবাল, সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিত। ইকবাল সে দিন গণ্ডগোল ছড়ানোর জন্য মানুষকে উস্কানি দিয়েছেন, তার একাধিক ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে। তার একটিতে দেখা গিয়েছে, দিল্লির লাহৌর গেটের কাছে জমায়েত হওয়া কৃষকদের লালকেল্লায় ঢোকার জন্য উস্কানি দিচ্ছেন ইকবাল।ইকবালকে আদালতে পেশ করা হলে তাঁকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের কাছে ইকবাল দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ। হিংসা ছড়াতে দিল্লি আসেননি। সে দিন লালকেল্লায় যাওয়ারও কোনও পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। কিন্তু এক বার পৌঁছে যাওয়ার পরে আবেগতাড়িত হয়ে কিছু লাইভ ভিডিয়ো প্রচার করেছিলেন। তবে কাউকে প্ররোচিত করেননি। পুলিশের পাল্টা দাবি, সে দিন লালকেল্লায় ঝামেলার পিছনে অন্যতম দুই মাথা ছিলেন দীপ সিধু ও ইকবাল। দু’জনেই গ্রেফতার হওয়ায় এ বার তাদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।
কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়া আন্দোলনকারীদের এনআইএ তদন্তের স্বার্থে ডেকে পাঠাচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়ে রাজ্যসভায় প্রশ্ন করেছিলেন কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি আজ জানান, আন্দোলনকারীদের ডেকে এনআইএ তদন্ত করছে না। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃষক আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নিষিদ্ধ খলিস্তানি সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) ভারতে নাশকতা ও ঝামেলা পাকানোর তালে রয়েছে। তার জন্য বিদেশ থেকে বেআইনি ভাবে বিভিন্ন সংগঠনকে টাকা পাঠানো হচ্ছে। কৃষক আন্দোলনকে সামনে রেখে আসলে ভারতে অশান্তি সৃষ্টি করাই প্রধান লক্ষ্য এসএফজে-এর।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিদেশ থেকে আসা অর্থের উৎস জানতে পঞ্জাব ও হরিয়ানার বেশ কিছু ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে ইতিমধ্যেই ডেকে পাঠিয়েছে এনআইএ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এর মধ্যে রয়েছেন ‘লোক ভালাই ইনসাফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র প্রেসিডেন্ট বলদেব সিংহ সিরসা-সহ কুড়ি জন। তালিকায় কৃষক নেতা ছাড়াও রয়েছেন লেখক, সাংবাদিক, এমনকি বেশ কিছু ব্যবসায়ীও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, যারা সম্প্রতি বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়েছেন এবং যাঁদের অর্থের উৎস নিয়ে সংশয় রয়েছে, শুধু তাঁদেরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, ওই ব্যক্তিরা সকলেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। যেহেতু খলিস্তানি শক্তি ভারতে অশান্তি ছড়াতে তৎপর রয়েছে, তাই বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য কী কারণে এসেছে, তা জানার অধিকার তদন্তকারী সংস্থার রয়েছে। লালকেল্লায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য ইকবালও বিদেশ থেকে অর্থসাহায্য পেয়েছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।