কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিতে আসা। নিজস্ব চিত্র
শিলচর থেকে কাটিগড়া, কালাইন, জালালপুর পেরিয়ে নাতানপুর। বেলা তখন দশটা। এরই মধ্যে বিএসএফ জওয়ানদের কাছে গেট-পাস রেখে ১০-১২ জন ভোট দিতে চলে গিয়েছেন। কাঁটাতারের বেড়ার ৫০০ মিটার দূরে নাতানপুর এলপি স্কুল৷ সেটিই তাঁদের ভোটকেন্দ্র। বৃদ্ধ আব্দুল মালিক হন্তদন্ত হয়ে গেটে পাস জমা করলেন। সঙ্গে প্রতিবেশী তরুণ সাহিন আহমেদ। কোথায় যাবেন? এত তাড়া? মালিক বললেন, ‘‘ভোট দিতে হবে যে!’’
কেউ কি গিয়েছিলেন আপনাদের কাছে ভোট চাইতে? মুখ নামিয়ে জবাব দিলেন, ‘‘কাঁটাতার পেরিয়ে কে আর যায় বলুন? নিজেদের অধিকার হাতছাড়া করতে চাই না। তাই নিজেরাই ছুটে গিয়ে ভোট দিই।’’
কাছাড় জেলার নাতানপুরে কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে মোট ৩০টি পরিবার। ৬টি পরিবার হিন্দু, বাকিরা মুসলমান। নাতানপুর বর্ডার আউট পোস্টের ইনচার্জ এএসআই জামালুদ্দিন বললেন, ওখানে ধর্মের নামে সংঘাত নেই। বেশ মিলেজুলে তাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়ান।
ভোটকেন্দ্রে গিয়েও সে কথার প্রমাণ মিলল। করিমুদ্দিন নিজেদের সুখদুঃখের কথা বলার জন্য ডেকে আনলেন নির্মল দাসকে। দু’জনে মিলে শোনালেন, নিজের দেশে ঢুকতে গেলে তাঁদের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আসতে হয়! তা-ও বিএসএফ নির্দিষ্ট সময়ে গেট খুলে দেয়, আবার সময়ে বন্ধও করে দেয়। সূর্যাস্তের পর গোটা গ্রাম তালাবন্দি৷ বিশেষ করে রুজি-রোজগার কমে যায় গেটের জন্য। পাঁচটার আগে গেট পেরোতে হলে সাড়ে তিনটায় কাজ ছেড়ে আসতে হয়। তাই কাঁটাতারের ওপারের কাউকে মানুষ দিনমজুরিতে নিতে চান না।
আর ও পারে? সে দিকে তো কাঁটাতার নেই! ততক্ষণে সাহিন ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। ভোটকেন্দ্রে দেওয়া গ্লাভস খুলতে খুলতে বিস্ময়ের সুরে বললেন, ‘‘ও দিকে তো বাংলাদেশ। নিজের দেশই আমাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে চায় না, আর তাদের কথা! হাভাতেদের ঘরেও চুরি করতে আসে। গরু-মোষ নিয়ে যায়।’’
আজ অসম বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে আজ ৭৭.২১% ভোট পড়েছে৷ অনেক জায়গায় সন্ধ্যা ৬টার পরও দীর্ঘ লাইন দেখা গিয়েছে৷ শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লাইন ছিল দীর্ঘতর৷ নলবাড়ি, মরিগাঁও এবং নগাঁও কেন্দ্রে ভোট পড়েছে সবচেয়ে বেশি৷ কাছাড় জেলার সোনাইয়ে ডেপুটি স্পিকার আমিনুল হক লস্করের উপস্থিতিতে বিজেপি ও এআইইউডিএফ কর্মীদের সংঘাতের সময়ে গুলিতে ২ জন জখম হয়েছেন৷ কারা গুলি চালিয়েছে, স্পষ্ট নয়৷