কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন— ফাইল চিত্র।
অর্থমন্ত্রকের নির্দেশিকার জেরে সরকারি পদে নিয়োগ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের সাফাই দিল কেন্দ্র। শনিবার বিবৃতি প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, "আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় ব্যয় সঙ্কোচের উদ্দেশ্যে শুক্রবার অর্থ মন্ত্রক যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তার জেরে সরকারি নিয়োগ কোনও ভাবেই ব্যাহত হবে না।’’
শুক্রবার অর্থ মন্ত্রকের জারি করা সার্কুলারে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রক, দফতর ও অধীনস্থ সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ব্যয় সংক্রান্ত দফতরের অনুমতি ছাড়া আর নতুন কোনও পদ তৈরি করা যাবে না। সেই সঙ্গে সমস্ত উপদেষ্টা পদে যাবতীয় নিয়োগ ফের পর্যালোচনা করে দেখতে হবে, কাঁটছাঁট করতে হবে প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের মতো অনুষ্ঠান। আমদানি করা কাগজে বই বা পত্রিকা ছাপার কাজও বন্ধ করার নির্দেশ ছিল ওই সার্কুলারে।
কোনও সরকারি প্রকল্পের জন্য ন্যূনতম যত জন উপদেষ্টা প্রয়োজন, কোনও অবস্থাতেই তার বেশি না রাখার কথাও জানিয়েছিল অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ব্যয় সংক্রান্ত দফতর। ওই উপদেষ্টা বা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত আধিকারিকদের ফি কাজের পরিমাণ ও মানের সঙ্গে সাযুজ্যহীন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছিল। কোনও মন্ত্রক বা দফতরে কোনও পদ ১ জুলাইয়ের পরে ব্যয় সংক্রান্ত দফতরের সায় ছাড়া তৈরি হয়ে থাকলে এবং এখনও পূরণ না হলে, আর করা যাবে না। যদি নিয়োগ একান্তই জরুরি হয়, আগে ওই অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন: ফের খরচে কাঁচি কেন্দ্রের, বন্ধ নতুন পদ তৈরি
অর্থ মন্ত্রকের ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই সরব হয় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আবহে নরেন্দ্র মোদী সরকারি নিয়োগ বন্ধ করে যুবসমাজকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দিতে চাইছে— এই যুক্তিতে অবিলম্বে ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারেরও দাবি তোলে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: চিনের আগ্রাসী আচরণের প্রতিবাদ করেও আলোচনাতেই সায় রাজনাথের
এই পরিস্থিতি শনিবার টুইট-বার্তায় অর্থ মন্ত্রকের দাবি, "অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা পরিচালনার উদ্দেশ্যেই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এর ফলে কোনও অবস্থাতেই সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আঁচ আসবে না।’’ ইউপিএসসি, এসএসসি (স্টাফ সিলেকশন কমিশন), রেলওয়ে সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মতো সংস্থাগুলিতে আগের মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে এবং সরকারি প্রকল্পগুলিতে উপদেষ্টা নিয়োগের পরম্পরাও বজায় থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মন্ত্রকের দাবি।
ব্যয় সংক্রান্ত দফতর কিছু দিন আগেও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি প্রকল্পগুলির কাজে গতি আনতে কিছু ‘অ-উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে’ খরচ কাটছাঁটের নির্দেশ দিয়েছিল। ডিজিটালে জোর দেওয়ার যুক্তিতে সব মন্ত্রক, সরকারি দফতর, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে ডায়েরি, দেওয়াল ও ডেস্ক ক্যালেন্ডার, গ্রিটিংস কার্ড, এমনকি বই ছাপানোও বন্ধ করতে বলা হয়। বার্তা দেওয়া হয়, আগামী বছর থেকে এ সব ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। আনতে হবে ই-বুক।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ লক্ষ ছুঁতে পারে ডিসেম্বরে
সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছাতেই ব্যয়সঙ্কোচের এই পদক্ষেপ করেন নির্মলা। শুক্রবারের সরকারি নির্দেশিকাও ছিল সেই পরিকল্পনারই অংশ। কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী ওই নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার অভিযোগ তোলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। বিহারের বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীরা বিষয়টি রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার করতে পারে, এমন আশঙ্কাতেই দ্রুত সাফাই দিতে ময়দানে নামল অর্থমন্ত্রক।