শরদ পওয়ার।
মার্চের শেষে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেতাদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখার পরে একমাত্র নড়েচড়ে বসেছিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার। সে সময় নয়াদিল্লিতে তৃণমূলের এক সাংসদকে তিনি বলেছিলেন, মুম্বইয়ে বৈঠকের আয়োজন করবেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলও বিষয়টিতে আশ্বস্ত হয়, কারণ জোটের নেতৃত্ব কংগ্রেসের হাতে যাওয়ায় ঘোর ‘অ্যালার্জি’ শীর্ষ নেতৃত্বের। ঘরোয়া স্তরে তৃণমূলের ব্যাখ্যা ছিল, দিল্লিতে জোটের বৈঠক হলে অবধারিত ভাবে তার রাশ থাকবে সনিয়া গান্ধীর হাতে। মুম্বইয়ে সে রকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কিন্ত মমতার চিঠি পাওয়ার এক পক্ষকাল পরে, বৃহস্পতিবার এনসিপি শীর্ষ নেতার কথায় স্পষ্ট, কংগ্রেসকে গুরুত্বহীন করে কোনও বিরোধী জোটে উৎসাহী নন তিনি। মুম্বইয়ে সাংবাদিকদের সামনে পওয়ার বলেন, “অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলিকে একজোট করার যে প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে চলেছি, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই তা আমরা করতে চাই।” তিনি বলেন, “কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও ফ্রন্ট তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ তারা এখনও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। সে জন্য কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পওয়ারের এই মন্তব্যের আগেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রসঙ্গে পওয়ার বলেন, তিনি বা মমতা এখনও বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেননি। নয় থেকে দশ জন অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা ওঁদের কাছে সুবিধা মতো সময় চাইব। কোথায় বৈঠকটি হতে পারে, তা নিয়েও কথা বলব।”
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মমতা যাঁদের চিঠি দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীও রয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব কখনই চান না, সনিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী জোটের দিশা নির্দিষ্ট হোক। কিন্তু আজ পওয়ারের কংগ্রেসের ভূমিকাকে এতটা বড় করে দেখানো নিঃসন্দেহে কিছুটা হতাশ করবে তৃণমূলকে— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
পাশাপাশি ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিনও সনিয়া গান্ধীর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি সিপিএমের মঞ্চে দাঁড়িয়ে, বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের পাশে নিয়ে তিনি ডাক দিয়েছেন দক্ষিণ ভারতের অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে জোট গড়ার। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, ভবিষ্যতের জাতীয় জোটের নেতৃত্বের দৌড়ে যথেষ্ট সক্রিয় দেখা যাচ্ছে স্ট্যালিনকে। স্ট্যালিন এরই মধ্যে দিল্লিতে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। বিষয়টি আগাম আঁচ করেছিল তৃণমূল। আর সে কারণেই তৃণমূলের সংসদীয় শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁরা সেই অনুষ্ঠানে যাননি।