নীতীশ কুমার।
বিহারে বিজেপি-জেডি (ইউ) জোট সরকারের পতন হতে চলেছে, এমন জল্পনার আবহেই এ বার সে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী, কাটিহারের বিজেপি বিধায়ক তারকিশোর প্রসাদের সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নীতীশ এবং বিজেপির মধ্যে বিচ্ছেদ হচ্ছেই, তা ধরে নিয়ে সব ক'টি দল তাদের বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছে।
রবিবারই নীতীশের দল জেডি (ইউ)-র জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের আসনসংখ্যা কমানোর জন্য ‘চক্রান্ত’ হয়েছিল। নীতীশ যে জোটসঙ্গী বিজেপির থেকে ক্রমে দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল বেশ কিছু ঘটনায়। নীতি আয়োগের বৈঠকে কমবেশি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজেও দেখা যায়নি নীতীশকে।
বিহারে জোট সরকারে যে একটা সমস্যা হচ্ছে, তা অস্বীকার করছেন না বিজেপি নেতৃত্বও। রাজ্যের এক বিজেপি মন্ত্রীর বক্তব্য, সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য নীতীশের বারংবার পক্ষ পাল্টানোর নজির স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আরজেডি-সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েন নীতীশ। এ বার নীতীশ পুনরায় জোটধর্ম ভুলে আরজেডি-র সঙ্গে হাত মেলালে তাঁকে আক্রমণ শানানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিজেপি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেডি (ইউ) নেতা জানান, বিধানসভায় বিজেপির তুলনায় কম আসন পাওয়া সত্ত্বেও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করে পুরনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিল বিজেপি। কিন্তু একইসঙ্গে বিজেপি জেডি (ইউ)-কে হীনবল এবং নীতীশকে অপমান করার চেষ্টা করে গিয়েছে বলে এই নেতা অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রত্যাশা মতো স্থান না পাওয়া নিয়ে আগে থেকেই জেডি (ইউ)-র অন্দরে ‘ক্ষোভ’ তৈরি হচ্ছিল। বিজেপিও বিহারে নিজেদের মতো করে সংগঠন বিস্তারে মন দিয়েছিল। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, অমিত শাহ হয়তো ২০২৪-এর লোকসভা এবং ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য নীতীশের দলের সঙ্গেই জোট বজায় রাখার ঘোষণা করতেন। তবে একইসঙ্গে এই নেতার দাবি, দলের একাংশ দীর্ঘ দিন ধরেই বিহারে একক শক্তিতে লড়াই করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তদ্বির করছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২৪৩ আসনবিশিষ্ট বিহার বিধানসভায় জেডি (ইউ)-র আসনসংখ্যা ৪৫, বিজেপির ৭৭। অন্য দিকে আরজেডি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের দখলে ১১৬টি আসন। সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসনসংখ্যা ১২২। সুতরাং, বিরোধী জোটের সমর্থনে নীতীশের সরকার গড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউই। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি দল পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে। তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এসেছে লালুপ্রসাদের দল আরজেডি-র তরফে। পুরনো তিক্ততা ভুলে তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করতে বদল চাইছেন বলেও দাবি করেছে জেডি (ইউ)। বিহার-রাজনীতির জল কত দূর গড়ায়, তার দিকেই ঔৎসুক্য নিয়ে তাকিয়ে আছেন রাজনীতির কারবারিরা।