বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শেষে সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মঙ্গলবার দিল্লিতে। পিটিআই
বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার প্রশ্নে কংগ্রেস-বাম দলগুলি এবং অন্য সব বিরোধী আঞ্চলিক দলের এক ছাতার তলায় আসার সময় হয়ে গিয়েছে। সেই সমন্বয়ের কাজের সলতে পাকাতেই তাঁর এবারের দিল্লি সফর বলে আজ দাবি করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ফের জানালেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনও বাসনা তাঁর নেই। আর বিরোধীদের তরফে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা সময় ও পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে।
গতকাল সন্ধেয় রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পরে বিজেপি-বিরোধী জোটের অস্ত্রে শান দিতে আজ সকাল থেকেই মাঠে নেমে পড়েন নীতীশ। একেবারে শুরুতে সিপিআই ও সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বামেদের সঙ্গে তাঁর পুরনো বন্ধুত্বের স্মৃতিকেও আজ উস্কে দিয়েছেন নীতীশ। সিপিএমের সদর দফতর এ কে গোপালন ভবনের সামনে দলের শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরিকে পাশে নিয়ে নীতীশ বলেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে আমার পরিচয় অল্প বয়স থেকেই। আপনারা অনেকেই দেখেননি, আগে যখনই দিল্লি আসতাম, এই দফতরে ঘুরে যেতাম আমি। আজ আমরা সবাই একসঙ্গে। আমাদের লক্ষ্য, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে দেশের সমস্ত বিরোধী আঞ্চলিক দলকে এক জায়গায় নিয়ে আসা। যদি আমরা সবাই একজোট হতে পারি, তাহলে একটা বড় ঘটনা ঘটবে।’’
জেডিইউ নেতাদের মতে, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে দেশের সব বিরোধী আঞ্চলিক দল যদি এক মঞ্চে আসতে পারে, তবে আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা সম্ভব হবে। কারণ, কংগ্রেস কিংবা কোনও আঞ্চলিক দলের পক্ষে বিজেপিকে একা পরাস্ত করা কার্যত অসম্ভব। তাই জাতীয় স্বার্থে আঞ্চলিক দলগুলির একজোট হওয়ার সময় এসেছে। জেডিইউ নেতৃত্ব এ কথা বললেও রাজনীতির বৃত্তের অনেকেরই মতে, কাজটি রীতিমতো কঠিন। বিশেষ করে, আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস একটি বড় শক্তি। লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সিপিএম বা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই করার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এ ধরনের সমস্যা কেবল পশ্চিমবঙ্গেই নয়, অনেক রাজ্যেই রয়েছে। সমস্যা যে রয়েছে, সেকথা জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগীও স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে বিকল্প পথ হিসাবে রাজ্যভিত্তিক নির্বাচনে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখা হোক। কিন্তু দেশের স্বার্থে, বিজেপিকে হারানোর প্রশ্নে লোকসভায় সব দল এক জোট হয়ে লড়াইয়ে নামুক।’’ তবে সে ক্ষেত্রেও দলগুলির রাজনৈতিক মতাদর্শের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠবে, তা-ও মেনে নিয়েছেন জেডিইউ নেতা। জেডিইউ নেতৃত্বের যুক্তি, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে এক জোট হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। বাম-কংগ্রেস ও বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে তা বুঝতে হবে।
আজ আপ নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গেও প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন নীতীশ। সূত্রের মতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রসঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির ‘অপারেশন লোটাস’ অভিযান নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে। নীতীশ রাতে দেখা করেন পুরনো সতীর্থ ও বর্তমানে লালুপ্রসাদের আরজেডিতে যোগ দেওয়া নেতা শরদ যাদবের সঙ্গে। পরে গুরুগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবকে দেখতে যান তিনি। সেখানে উপস্থিত মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও জোট নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সারেন।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এবাবের দিল্লি সফর আসলে নিজেকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা বলে গোড়া থেকেই সরব বিজেপি নেতৃত্ব। আজ এ ব্যাপারে নীতীশ বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল, সব বিজেপি-বিরোধী দলকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করা কোনও ভাবেই আলোচনার প্রথম বিষয় হতে পারে না। সময় যখন আসবে, তখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঠিক করে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ তবে নীতীশ এ কথা বললেও, তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ তথা এক সময়ে নীতীশের কারণে জেডিইউ থেকে বহিষ্কৃত শরদ যাদবের মন্তব্য, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নীতীশের চেয়ে যোগ্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আর কেউ নেই। বিরোধী জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী তিনিই হবেন।’’ বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নীতীশকে মেনে নিতে অবশ্য আপত্তি রয়েছে কংগ্রেসের। সূত্রের মতে, ইতিমধ্যেই দলের সেই অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জেডিইউ নেতৃত্বকে। সে কারণেই সব বিজেপি-বিরোধী দলকে একজোট করার কথা বললেও, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন নীতীশ।