ফাইল চিত্র।
প্রথমে লালু-পুত্র তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইফতারে যোগ। তার পরে জাতি-গণনা নিয়ে তেজস্বীর সঙ্গে আলোচনা। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের এই দুই কাজেই কপালে ভাঁজ পড়েছিল বিহারের শাসক এনডিএ-জোটের বড় শরিক বিজেপির। তা আরও বাড়ল, লালুপ্রসাদের বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে নীতীশের নির্লিপ্ত আচরণে।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। মাত্রই কিছু দিন আগে পশুখাদ্য মামলায় জামিন পেয়েছেন লালু। তার পরেই এমন হানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী শিবিরে। লালু-ঘনিষ্ঠ এবং বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, বহু চেষ্টা করেও সাম্প্রদায়িক বিজেপি কোনও ভাবেই লালুকে নরম করতে পারেনি। বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে একই রকম ভাবে সরব লালু। তারই ‘শাস্তি’ হিসেবে তাঁকে বারবার নানা ভাবে হেনস্থা করছে বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র অভিযোগও তুলছেন বিরোধী শিবিরের অনেকেই।
সরাসরি সে কথা না বলেও লালুর বাড়িতে এমন সিবিআই অভিযান নিয়ে আশ্চর্য রকম নির্লিপ্ত রইলেন বিহারের রাজনীতিতে লালুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা এর কিছুই জানি না। যারা তল্লাশি করেছে, তারাই বলতে পারবে।’’
আর নীতীশের এমন বক্তব্যের পরেই জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। গুঞ্জন বিহারেও। এমনতিই গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির থেকে কম আসন পেয়েও মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশের দল রাজ্য মন্ত্রিসভায় এক রকম দুয়োরানি হয়ে রয়েছে। সূত্রের খবর, একাধিক বিষয়ে সরকারের বড় শরিক বিজেপির ‘দাদাগিরি’তে বিরক্ত নীতীশ। তার মধ্যে লালু-পুত্রের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর ইফতারে যোগ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপি। তার উপরে যোগ হয়েছে, বিজেপি নেতাদের কাছে চরম অস্বস্তির জাতি-গণনার বিষয়টি। তেজস্বী-সহ একাধিক বিরোধী নেতা বেশ কিছু দিন ধরেই দেশে জাতি-গণনার দাবি তুলে সরব। আর তাতেই বিজেপির আপত্তি। বিজেপি-বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, মনুবাদী সঙ্ঘ পরিবার হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের রাজনীতিকে ব্যবহার করে ভোটে জেতার অঙ্ক কষলেও তাদের আসল লক্ষ্য ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। সে কারণেই তারা জাতি গণনার বিরোধী। আর এসপি-বিএসপি-আরজেডি-র মতো দলগুলি এটাকেই ব্যবহার করে বিজেপিকে বিপদে ফেলতে চায়। সেই অঙ্কে নীতীশের ওই আলোচনাকে মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি বিজেপি।
নীতীশও কি তা হলে বিজেপির আচরণে বিরক্ত? সেই প্রশ্নটাই এ বারে তাড়া করছে প্রতিদ্বন্দ্বী লালুর বাড়িতে সিবিআই হানা নিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায়। অনেকেই বলছেন, যে সময়ে এবং যে ভাবে লালুর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হল,তাতে বিলক্ষণ বিরক্ত নীতীশ। তাঁর দলের নেতারাও এ নিয়ে যে ভাবেমুখে কুলুপ এঁটেছেন, তাতে জল্পনা আরও বেড়েছে।