কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক ফায়দা লাভের লক্ষ্যে কেউ কেউ তাঁর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা খবর প্রচার করছে বলে সরব হলেন মহারাষ্ট্রের বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। কে সেই ব্যক্তি তা নিয়ে মুখ না খুললেও, বিরোধীদের দাবি, গডকড়ী বিজেপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলেছেন।
গত সপ্তাহেই বিজেপির সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয় গডকড়ীকে। দলে কাজের মানুষ ও স্পষ্টবক্তা বলে পরিচিত গডকড়ীর নানা বিষয়ে মুখ খোলাই তাঁর ছাঁটাইয়ের কারণ বলে বিজেপি সূত্রের একাংশের তরফে দাবি করা হয়— যা প্রকাশিত হয় একটি সংবাদপত্রে।
অতীতেও সরকারের খামতি তুলে ধরে প্রকাশ্যে সরব হতে দেখা গিয়েছে গডকড়ীকে। তার উপরে সম্প্রতি ন্যাশনাল কনভেনশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স-এর অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে বড় পুঁজি কিছু হতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হল সরকার সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। প্রযুক্তি ও সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান হল সময়।’’ সরকারের দীর্ঘসূত্রিতার দিকে আঙুল তোলাকে হাতিয়ার করে প্রচারে নামে দলে গডকড়ীর বিরোধী শিবির। তাঁর ওই ভিডিয়োর স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দিয়ে বিজেপিরই একাংশের তরফে দাবি করা হয়, অপ্রয়োজনে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন তিনি। প্রকাশ্যে সরকার বিরোধিতার কারণে তাঁকে এ যাত্রায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নির্ণায়ক বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আত্মপক্ষ সমর্থনে আজ মুখ খুলেছেন গডকড়ী। টুইট করে বলেছেন, ‘‘কিছু লোক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্যকে ভুল ভাবে তুলে ধরছে। আমার নামে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। যদিও আমি এ ধরনের বক্তব্যে কোনও ভাবে প্রভাবিত হই না। কিন্তু আগামী দিনে সরকার, দল ও কর্মীদের স্বার্থে এ ধরনের প্রচার যারা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হব না।’’ এর পরে তিনি সে দিন ওই অনুষ্ঠানের ভিডিয়োটি শেয়ার করেন। তাঁর দাবি, ভিডিয়োটি কাটছাঁট করে চালানো হচ্ছে। ফলে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।
ঘটনা হল, গডকড়ী এক দিকে যেমন দলীয় কর্মীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তেমনই মোদী মন্ত্রিসভার প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সফল মন্ত্রীদের তালিকায় একেবারে শীর্ষে। তবু কেন গডকড়ীকে সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীই প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। দলের অভ্যন্তরে অনেকেই ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্বের একটি বড় অংশ। গডকড়ী ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আপ-এর রাজ্যসভার নেতা সঞ্জয় সিংহও। তাঁর টুইট, ‘‘কেন এ ভাবে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হচ্ছে গডকড়ীকে!’’
রাজনীতির শিবিরের অনেকে মনে করছেন, আসলে পরিকল্পিত ভাবেই গডকড়ীকে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। কেন তাঁকে বাদ দেওয়া হল, তা ফাঁস করে দিয়ে কৌশলে বার্তা দিতে সক্রিয় হয়েছেন দলে গডকড়ীর বিরোধী শিবির। গডকড়ীর বিরুদ্ধে প্রচার থেকেই স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা হারিয়েছেন তিনি। অনেকের মতে, মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে নিজের স্থান ধরে রাখা কঠিন হতে পারে গডকড়ীর জন্য।