প্রতীকী ছবি।
নিখরচায় নয়। স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজকেও আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার পক্ষে সওয়াল করল নীতি আয়োগ।
আয়োগ কর্তাদের মতে, একমাত্র তবেই আগামী এক দশকের মধ্যে দেশের সমস্ত মানুষকে একই ধাঁচের স্বাস্থ্য পরিষেবার ছাতার তলায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ঘটি-বাটি। সারা জীবনের সঞ্চয় বেরিয়ে যাচ্ছে রোগের পিছনে। পথে বসতে হচ্ছে বহু পরিবারকে। খরচ সামলাতে না পেরে আত্মঘাতী হচ্ছেন অনেকে। গোটা দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওই ছবিটি পাল্টাতে উদ্যোগী হয়েছে নীতি আয়োগ। যে ব্যবস্থায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা যেমন এ যাবৎ বিনা খরচায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধে পেয়ে এসেছেন তেমনিই পাবেন।
আরও পড়ুন: ফারুখ আবদুল্লা কোথায়? শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই উত্তাল সংসদ
তবে যে সব মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবার ওই প্রকল্পের আওতায় আসবে তাদের জন্য পরিবার পিছু মাসিক একটি খরচ ধার্য করার সুপারিশ করেছে নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগ কর্তাদের ইঙ্গিত, ‘‘মাসিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকাও পরিবার পিছু দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মাসিক পরিবার পিছু বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারতের একটি নিজস্ব তহবিল গড়ে উঠবে। যার ভিত্তিতে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে দরদাম করে কম দামে আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
আজ নীতি আয়োগের পক্ষ থেকে নতুন ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিল গেটস। নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের কথায়, ‘‘আগামী এক দশকে বিশ্বের সমস্ত মানুষকে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারতও সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।’’ চালু হয়েছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প। বর্তমানে যার আওতায় রয়েছেন দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ। মূলত নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরাই ওই প্রকল্পের সুবিধে পেয়ে থাকেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ভারতে চিকিৎসা খাতে মোট ৪.৯৮ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেছেন দেশবাসী। এর মধ্যে প্রায় ৩.১৫ লক্ষ কোটি অর্থাৎ ৬৪ শতাংশ অর্থ গিয়েছে সরাসরি আমজনতার পকেট থেকে। যা হিসাব বর্হিভূত। নীতি আয়োগের উপদেষ্টা (স্বাস্থ্য) অলোক কুমারের কথায়, ‘‘ওই টাকা খরচ হওয়ার ছিল সংসারের অন্য খাতে। কিন্তু চিকিৎসা সঙ্কট এসে যাওয়ায় ওই খাতে খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশবাসী।’’ বাকি ১.৮৩ লক্ষ কোটি মিটিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিমা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিমা, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মী স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলি।
আয়ুষ্মান প্রকল্পের মতো প্রকল্প যাতে আজীবন চলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার উপরেও জোর দিয়েছে নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপদেষ্টা অলোক কুমারের মতে, ‘‘একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধে যদি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় তা হলে কোনও লাভই হবে না। কারণ মানুষের যত বয়স বাড়ে ততই চিকিৎসা খাতে খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।’’