সংসদ ভবন।
কর্নাটক নিয়ে লোকসভায় যখন বিরোধীরা একসঙ্গে সরব, তখন সেই হট্টগোলের মধ্যেই আজ চিট ফান্ডের রমরমা রুখতে নতুন বিল পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যে বিলের মাধ্যমে ফের বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে মোদী সরকার। কারণ, এই বিলে কংগ্রেস, সিপিএম সমর্থন জানাবে। বিজেপির সঙ্গে তারাও এই বিলের সূত্রে তৃণমূলকে নিশানা করবেন বলে বিজেপি নেতারা অঙ্ক কষছেন। পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে সারদা-রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই-ইডি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বিলকে ঘিরে রাজনৈতিক ভাবেও বিজেপির তৎপরতা শুরু হবে।
নির্বাচনের আগেই লোকসভায় চিট ফান্ড বিরোধী বিল বা ‘ব্যানিং অব আনরেগুলেটেড ডিপোজিট স্কিমস বিল’ পাশ করিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু রাজ্যসভায় বিলটি পাশ না হওয়ায় অধ্যাদেশ জারি হয়। এ বার সেই অধ্যাদেশকেই পাকাপাকি আইনের চেহারা দিতে বিল পেশ করল সরকার। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে টাকা জমা নেওয়া রুখতে সামগ্রিক আইন তৈরি হবে।’’
নতুন আইনে সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের আইনের ফাঁক গলে কোনও সংস্থাই যাতে চিট ফান্ডের কারবার খুলতে না-পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে ১৯৭৮ সালে ‘প্রাইজ চিট অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন স্কিম (ব্যানিং) অ্যাক্ট’ এবং ১৯৮২ সালে চিট ফান্ড আইন তৈরি হয়। সারদার মতো সংস্থাগুলিকে সাধারণ ভাবে ‘চিট ফান্ড’ বলা হলেও সেগুলি আইনি সংজ্ঞায় চিট ফান্ডের আওতায় পড়ে না। আইন এড়াতে ভুঁইফোড় অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি ‘টার্ম ডিপোজিট’ ও ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’-এ টাকা তুলতে শুরু করে। ১৯৯২ সালে সেবি আইনে ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। তার আগেই, ১৯৩৪-এর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আইনে ‘টার্ম ডিপোজিট স্কিম’-র নামে বাজার থেকে বেআইনি টাকা তোলা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই চার আইনের ফাঁকফোকর গলেই সারদা-র মতো সংস্থাগুলি বারবার লগ্নি প্রকল্পের নাম ও ধরন পাল্টে কাজ করত। নতুন বিলে সেই ফাঁকফোকর রোখারই চেষ্টা হয়েছে। লোকসভায় পাশ করিয়ে নিয়ে বিলটি চলতি অধিবেশনেই রাজ্যসভায় বিল পাশ করিয়ে নিতে চাইছে সরকার।