রাহুল গাঁধী ও নির্মলা সীতারামন।
অর্থনীতির হাল ফেরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়াল বিরোধীরা। তাদের দাবি, নরেন্দ্র মোদী নিজেই অর্থনীতিতে দুর্যোগ ডেকে এনেছেন। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে টাকা সরিয়ে সুরাহা হবে না। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী যেমন বলেন, ‘‘কী ভাবে নিজেদের তৈরি অর্থনৈতিক দুর্যোগের সমাধান হবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দিশাহারা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে টাকা চুরি করে কোনও লাভ হবে না। কারণ এ হল ওষুধের দোকান থেকে ব্যান্ড-এড চুরি করে গুলির ক্ষত ঢাকা দেওয়ার মতো ব্যাপার।’’
রাহুলের কথার জবাবে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। এ দিন তাঁর বক্তব্য, ‘‘যখনই রাহুল গাঁধী চোর, চুরি, এই সব শব্দ ব্যবহার করেন, তখন আমার একটাই কথা মনে আসে। ভোটের আগেও উনি চোর-চোর-চুরি-চুরি অনেক বার বলেছেন। মানুষ ওঁকে জবাব দিয়েছেন। আবার সে সব শব্দ ব্যবহারে কী লাভ?’’
তবে রাজনৈতিক ভাবে নির্মলা যতই তীক্ষ্ণ জবাব দিন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে এ বার। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, ডি সুব্বারাওদের স্পষ্ট মত ছিল, উদ্বৃত্ত অর্থ চরম আর্থিক সঙ্কটে কাজে লাগতে পারে। সেই টাকায় হাত দেওয়া উচিত হবে না। উর্জিত পটেল, বিরল আচার্যরাও এই প্রশ্নেই আপত্তি তুলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সরে যান। কংগ্রেসের অভিযোগ, শক্তিকান্ত দাসকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে বসিয়ে, কেন্দ্রীয় বোর্ডে আরএসএস নেতা এস গুরুমূর্তিতে মনোনীত করে মোদী সরকার ভাঁড়ার থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার রাস্তা করেছে। যে কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের অর্থকে অনেকে ‘দাস ক্যাপিটাল’ বলেও কটাক্ষ করছেন।
এ নিয়েও নির্মলার জবাব আছে। তাঁর মতে, এ সবই ‘উদ্ভট’ যুক্তি। কারণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কই বিমল জালান কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাঁরাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার থেকে সরকারি কোষাগারে টাকা পাঠানোর সুপারিশ করেছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই সুপারিশ মেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠছে, তা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে দু’টি ভাগ। এক, রিয়ালাইজড ইকুইটি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুনাফা থেকে সরকারকে ভাগ দেওয়ার পর থেকে যাওয়া অর্থে যে সঞ্চয় তৈরি হয়। দুই, রিভ্যালুয়েশন ব্যালান্সেস। অর্থনীতি বিপদে পড়লে যে অর্থ কাজে লাগে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রথম খাত থেকেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতএব সঙ্কট-কালের জন্য সঞ্চিত অর্থে ঘাটতি হবে না।
বিরোধীদের কিন্তু বক্তব্য, ভাঁড়ারের ভাগাভাগির কথা সরকার এখন আত্মপক্ষ সমর্থনে মরিয়া হয়ে বলছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোষাগার সার্বিক ভাবেই দুর্দিনের ধন হিসেবে সঞ্চয় করে রাখার কথা। বিরোধীরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, আরবিআই কার্যত সরকারের চাপে বাধ্য হয়েই টাকা দেওয়ার কথা মেনেছে। প্রয়াত অরুণ জেটলির আমলে অর্থ মন্ত্রক এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখেছিল। কংগ্রেসের দাবি, মোদী সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। দু’সপ্তাহের মধ্যে পরিসংখ্যান দিয়ে জানাক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হচ্ছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ২০১৪ থেকেই মোদী সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুনাফার ৯৯ শতাংশ দখল করে প্রচারের কাজে খরচ করেছে। এ বার মোদীর শিল্পপতি বন্ধুদের লুঠ করা ব্যাঙ্কে নতুন পুঁজির জোগানে ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও বলেন, ‘‘রিস্ক এলিমেন্ট ফান্ড দেশের ভবিষ্যৎ। সেই তহবিলে হাত দিয়ে দেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হল।’’ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার প্রশ্ন, অর্থনীতিতে জরুরি
অবস্থা এলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের টাকা খরচ করা হয়। তার মানে কি সরকার মেনে নিচ্ছে, আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে?