Banks

শোধ হবে তো, সংশয়ে ব্যাঙ্ক ॥ ঋণ চাইলে দিতেই হবে, চাপ নির্মলার

শিল্পমহলকে আশার আলো দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, হোটেল-পর্যটনের মতো ক্ষেত্রের জন্য ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দেওয়া ও ঋণের কিস্তি শোধে স্থগিতাদেশের কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৫:১৪
Share:

নির্মলা সীতারামন।

দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যাঙ্ক-কর্তাদের বলেছিলেন, ছোট-মাঝারি শিল্প নতুন লগ্নির জন্য ঋণ চাইলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আগের ঋণ শোধ হয়নি বলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া চলবে না। আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শিল্পমহলের উদ্বেগ শুনে বললেন, ব্যাঙ্ক কোনও ভাবই ছোট-মাঝারি শিল্পের ঋণের আর্জি খারিজ করতে পারে না।

Advertisement

লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে জরুরি প্রয়োজনে ঋণের জন্য মোদী সরকার গ্যারান্টি তহবিলের ব্যবস্থা করেছে। তা সত্বেও ঋণ মিলছে না শুনে ব্যাঙ্ক কর্তাদের কার্যত সতর্ক করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী আজ বণিকসভা ফিকি-র শিল্পপতিদের বলেন, “ঋণের আর্জি খারিজ করা হলে তা নিয়ে অবশ্যই অভিযোগ জানান। আমি তা খতিয়ে দেখব।”

শিল্পমহলকে আশার আলো দেখিয়ে অর্থমন্ত্রী এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, হোটেল-পর্যটনের মতো ক্ষেত্রের জন্য ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দেওয়া ও ঋণের কিস্তি শোধে স্থগিতাদেশের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আলোচনা চলছে। লকডাউনের ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়া শিল্পমহলের একটা বড় অংশই ব্যাঙ্কের ঋণ কী ভাবে শোধ করবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। প্রথম সারির শিল্পপতিরা দাবি তুলেছেন, এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দেওয়া হোক। ঋণ শোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হোক বা কমানো হোক সুদের বোঝা। নির্মলা বলেন, “ঋণ শোধের শর্ত সহজ করার দিকে নজর রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। নীতিগত ভাবে এর প্রয়োজনীয়তা মেনে নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

অর্থমন্ত্রীর জোড়া আশ্বাসে শিল্পমহল খুশি হলেও ব্যাঙ্ক-কর্তারা চিন্তায়। তাঁদের আশঙ্কা, এক দিকে দরাজ হাতে ঋণ বিলি, অন্য দিকে ঋণ শোধের কিস্তি সহজ করতে গিয়ে অনাদায়ী ঋণ বা এনপিএ বেড়ে যেতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২১-এর মার্চে এনপিএ-র হার ১২.৫%-এ পৌঁছে যেতে পারে। যা এ বছরের মার্চে ছিল ৮.৫%।

আরও পড়ুন: শাহ আমাকে বৈঠকে ডাকেননি: মুকুল

অর্থ মন্ত্রক অবশ্য মনে করছে, লকডাউনের ফলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে সব সংস্থা ঋণ শোধ করতে পারছে না, তাদের জন্য এককালীন সুরাহা দিলে, ফের অর্থনীতি চলতে শুরু করবে। আবাসনের মতো ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু পুঁজি মিললেই ফের কাজ শুরু হতে পারে। কিন্তু ব্যাঙ্ক-কর্তাদের ভয়, নতুন ঋণও আগের অনাদায়ী ঋণের সঙ্গে যোগ হবে। অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের আলোচনার পরে দু’তরফের কর্তারাই মনে করছেন, সব ক্ষেত্রের জন্য না-করে কিছু ক্ষেত্রের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার ধাক্কায় সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন, হোটেল, নির্মাণ, আবাসন ও বিমান— এই পাঁচটি ক্ষেত্র। আগামী ছ’মাসেও এই ক্ষেত্রগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মতে, সব ক্ষেত্রে ঋণ শোধের শর্ত সহজ করে দিলে, তার অপব্যবহার হবে। ২০০৮-এ বিশ্ব জোড়া আর্থিক মন্দার পরেও এ দেশে একই রকম সুরাহা দেওয়া হয়েছিল। অনাদায়ী ঋণ কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়। অনেক ব্যাঙ্ক খাতায়-কলমে এনপিএ-র বোঝা কমাতে নতুন ঋণ মঞ্জুর করে, যাতে সেই টাকায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি আগের ঋণ শোধ করতে পারে। কিন্তু নতুন ঋণও অনাদায়ী থেকে যায়। ২০১৫-তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে সব প্রকাশ্যে আসে।

প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতিতে বড় মাপের পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য কে ঋণ দেবে? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এর আগে বলেছিলেন, শিল্পমহলকে টাকা জোগাড়ের নতুন রাস্তা খুঁজতে হবে। কারণ এনপিএ-র বোঝায় ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে পারবে না। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নীতি আয়োগের সুপারিশ ছিল, ইন্ডিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স কোম্পানি লিমিটেড-কে এর জন্য ঢেলে সাজানো হোক। আজ শিল্পমহলের একই প্রশ্নে নির্মলা জানিয়েছেন, উন্নয়নমূলক পরিকাঠামোয় অর্থ জোগানোর সংস্থা তৈরির কাজ চলছে। তা কী চেহারা নেবে, খুব শীঘ্রই জানা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement