—ফাইল চিত্র।
রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। তাড়া করছে সন্তানহারা মায়ের মাটিতে আছড়ে কান্না, ননদকে শেষ দেখার জন্য বৌদির অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনে উথালপাথাল দৌড়নো।
হাসপাতালে শুয়ে থাকা মেয়ের কালশিটে পড়া মুখটা ভেসে ওঠেছে মায়ের চোখের সামনে। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনা নতুন করে খুঁচিয়ে তুলেছে দৃশ্যগুলো। ফোন ধরেই নির্ভয়ার মা আশাদেবী দিল্লি থেকে শুক্রবার বললেন, ‘‘বহত তকলিফ হোতা হ্যায়! লাগতা হ্যায় ফির সে দো হাজার বারা মে পৌঁছ গ্যয়ে...।’’ (খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ২০১২ সালে ফিরে গিয়েছি)
পরিবারের অনুপস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের নির্যাতিতার দাহ হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই অস্থির হয়ে আছেন আশা। বলছেন, ‘‘এক জন মা সন্তানকে শেষ বারের মতো দেখতে চেয়েছিলেন। তার অনুমতি দেওয়া হল না! কীসের এত ভয়, কী লুকোনোর ছিল?’’ মায়ের ক্ষোভ, ‘‘মেয়েটা মরে গেল। বলা হচ্ছে, ধর্ষণের কোনও প্রমাণ নেই। সত্যিটাই জানা গেল না। সব চেয়ে জরুরি বিষয়, এক জন মেয়ে নিজে মৃত্যুর আগে যখন বয়ান দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে, কেন তা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসাবে ধরা হবে না! মেয়েটি তো ভিডিয়োয় স্পষ্ট বলেছেন— তাঁকে দু’জন ধর্ষণ করেছে, বাকিরা পালিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির মিথ্যে বলার হলে তো সবাইকেই জড়াতে পারতেন, দু’জনের কথা বলতেন না।’’
অন্য দিকে, দলিত পরিবারটিকে বয়ান বদলের জন্য খোদ প্রশাসনের তরফে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, সেই ভিডিয়ো দেখে অবাক হননি নির্ভয়ার মা। ইউপিএ আমলে কংগ্রেস শাসিত দিল্লিতে নির্ভয়ার উপর অত্যাচার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। হতাশা নিয়ে বলছেন, ‘‘সরকার বদলে যায়, পরিস্থিতি বদলায় না। সরকারের পুলিশ তো একই থাকে।’’
নির্ভয়ায় মায়ের মতে, ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি হলেও তা দৃষ্টান্ত হিসাবে অপরাধমনস্কদের মনে ভয় তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ— ভারতে আইনের প্রয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের ক্ষেত্রে অপরাধীদের ফাঁসির সাজা ঘোষণা হওয়ার পরেও কত দিন কেটে গিয়েছে তা বলবৎ হতে! লোকজন ভাবছে, দোষ করলেও ঠিক আইনের ফাঁক গলে বেঁচে যাবে। প্রথমে সবাই অপরাধীর শাস্তি চাইলেও সাজা ঘোষণার পর তার অর্ধেক সংখ্যক মানুষের অপরাধীদের মানবাধিকারের কথা মনে পড়ে যায়।’’
হাথরসের দলিতা মেয়েটির মায়ের জন্য এখন একটাই বার্তা আশাদেবীর — ‘‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তুলতেই হবে। ভয় পাবেন না। সবাই একসঙ্গে লড়ব। হয়তো তবেই আমার, আপনার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।’’