এ পি সিংহ। ফাইল চিত্র।
‘শেম টু ইউ এ পি সিংহ’।
আইনজীবীরা খুন বা ধর্ষণের মামলার আসামিদের হয়ে আইনি লড়াই লড়েই থাকেন। সেটাই তাঁদের কাজ। তার জন্য কোনও আইনজীবীকে ধিক্কার দেওয়া হয় না। কিন্তু নির্ভয়া কাণ্ডের চার অপরাধীর তৃতীয়বার ফাঁসি পিছিয়ে যাওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের আইনজীবী এ পি সিংহকেই ধিক্কার জানালেন নেট-নাগরিকেরা।
কে এই এ পি সিংহ? লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক অজয় প্রকাশ সিংহ সুপ্রিম কোর্টে বা দিল্লির নানা কোর্টে ওকালতি করছেন ১৯৯৭ থেকে। কিন্তু ২০১২-য় নির্ভয়া-কাণ্ডের চার অপরাধীর হয়ে মামলা লড়তে রাজি হওয়ার পরেই তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সে সময়ে দক্ষিণ দিল্লির সাকেত আদালতের কোনও আইনজীবীই ওই মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে লড়তে চাইছিলেন না। কিন্তু এ পি সিংহ রাজি হয়ে যান।
কেন এই মামলা লড়তে রাজি হয়েছিলেন? এ পি সিংহ এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, তাঁর মা তাঁকে এই মামলা লড়তে বলেন। কেন? এ পি-র উত্তর ছিল, অন্যতম অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুরের স্ত্রী বিহার থেকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে তিহাড় জেলে দেখা করতে এসেছিলেন। কেউ সে সময় তাঁকে এ পি-র ফোন নম্বর দেন। অক্ষয়ের স্ত্রী এ পি-র বাড়ি গিয়ে তাঁর মায়ের দ্বারস্থ হন।
মামলা শুরুর পরেও তাঁর আইনি সওয়াল নিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে এ পি-কে। নিজের মক্কেলদের বাঁচানোর সাজা থেকে বাঁচানোর বদলে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নির্ভয়া বেশি রাতে একটি ছেলের সঙ্গে বাইরে ঘুরছিল? এ পি কোর্টে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আমি যে সমাজ থেকে এসেছি, সেখানে এ সব বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সম্পর্ক প্রশংসনীয় নয়।’’
এখানেই শেষ নয়। সাকেত কোর্টের বিচারক যোগেশ খন্না ২০১৩-য় চারজনকেই ফাঁসির নির্দেশ দেওয়ার পরে এ পি তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির চাপে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
রায়ের পরে সাংবাদিকদের সামনে তাঁর মন্তব্যের জন্য আরও নিন্দার মুখে পড়তে হয় এ পি-কে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ে বা বোন বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক করলে বা মুখে কালি মেখে ফিরলে আমি আমার খামার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গোটা পরিবারের সামনে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতাম।’’ এ পি সিংহের নিজের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার পরেও অপরাধীদের রিভিউ পিটিশন, কিউরেটিভ পিটিশন বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে এ পি সিংহ টালবাহানা করেছেন বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, একই অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের একসঙ্গেই ফাঁসি হয়। সেই সুযোগ নিয়ে আলাদা আলাদা করে এক এক জনের হয়ে শেষ মুহূর্তে আর্জি জমা করেছেন। পবন গুপ্তের হয়ে শেষ বেলায় কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করেছেন এ পি। মঙ্গলবারের নির্ধারিত ফাঁসির আগে তা খারিজ হওয়ার পরে এ দিনই প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা করেছেন। ফলে ফের পিছিয়েছে ফাঁসি। পাটিয়ালা হাউস কোর্টের বিচারক তাঁকে বলেছেন, ‘‘আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন।’’